বিচারকের আসনে ট্রান্সজেন্ডার জয়িতা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ২০:২৭
চার বছর আগেও থাকার জায়গা ছিল না। বিহার ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ইসলামপুরের হোটেল থেকে ঘাড়ধাক্কা খেয়ে বাসস্ট্যান্ডেই রাত কাটিয়েছিলেন জয়িতা। কিন্তু সেসব অপমানের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ এসেছে এবার। ভারতে বিচারক হিসেবে এবার দেখা যাবে তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মণ্ডলকে।
কয়েক বছর আগে কলকাতায় নেতাজি নগরের একটি কলেজে বিএ পড়ার সময়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ২৯ বছরের জয়িতা। তখন তার নাম ছিল জয়ন্ত। পরে নিজের নাম দেন জয়িতা। শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে এইচআইভি সচেতনতার কাজ করতে করতেই তার প্রথমবার ইসলামপুরে যাওয়া। প্রান্তিক এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কাজের ইচ্ছাটা তখনই আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
কিছুদিন আগেও আশ্রয়হীন থাকা এই জয়িতা গত ৮ জুলাই (শনিবার) ইসলামপুর লোক আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। ইসলামপুরেই সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে এই স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন তিনি।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজ করা বা সামাজিক মর্যাদার অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ায় জয়িতাদের লড়াই কিছুটা মসৃণ হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে।
ওই বোর্ডের সদস্য রাজ্য সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেন বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলায় জেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কমিটিও গড়া হচ্ছে।’
তার মতে, জেলায় জেলায় সমাজের বিশিষ্ট ভূমিকায় ট্রান্সজেন্ডাররা উঠে এলে তা সামাজিক বিদ্বেষ বা ভুল ধারণা ভাঙতেও সাহায্য করবে। ইসলামপুরে জয়িতার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।
জয়িতা প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসক আয়েষা রানি বলে, "তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে নয় বরং একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজকর্মী হিসেবেই জয়িতা প্রশাসনের সম্পদ"।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জয়িতা বলেন, "এতদিন আইনি লড়াই লড়তে কোর্টে গিয়েছি। কিন্তু এখন নিজেই বিচারক হিসেবে কাজ করব"।
উল্লেখ্য, ইসলামপুরে ১৯৭ জন ট্রান্সজেন্ডারকে নিয়ে কাজ করছেন জয়িতা। তার চেষ্টাতেই সেখানে কেন্দ্রীয় রোগী কল্যাণ সমিতি প্রকল্প বা সরকারি বৃদ্ধাবাস সামলাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা। প্রশাসনের সাহায্যে হাতের কাজ, বিউটিশিয়ান, সেলাইয়ের কাজও শেখানো হচ্ছে অনেককে।