কোন প্রতিকূলতাই আটকাতে পারেনি রেজিয়াকে
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:১৭
পড়াশুনা করে মানুষ হবার স্বপ্নে বিভোর কিশোরী রেজিয়া (১৭)। ক্ষুদা আর অর্থাভাব নিয়েও সংগ্রাম করছিল মানুষ হবার। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আবার বাসার কাজে সহযোগীতা চলছিল সমানতালে। এমন সময় তার পড়াশুনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বয়ং মা। হঠাৎ করেই কিশোরী রেজিয়া বিয়ে ঠিক করেন তার মা সাহিদা খাতুন। কিন্তু এসব বাধা আর নানা প্রতিকূলতা আটকাতে পারেনি কিশোরী রেজিয়াকে। সংগ্রামী রেজিয়া হিসেবেই এলাকায় রয়েছে তার পরিচিতি।
আর এ কারণে সম্প্রতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এ কিশোরীকে দেওয়া হয়েছে জয়িতার পুরস্কারও। বর্তমানে আত্মপ্রত্যয়ী মেয়েটি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে অধ্যায়ন করছে। কিশোরী রেজিয়া উপজেলার উত্তর তালুক পলাশী গ্রামে নানীর বাড়িতেই বসবাস।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শুকানদীঘি গ্রামের আছিমুদ্দীনের মেয়ে রেজিয়া। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৩ বছর পূর্বে তার বাবা মারা যায়। রেজিয়ার বাবা ছিলেন দিনমজুর। আর জমা-জমি বলতে মাত্র ৫ শতক ভিটেমাটি। বাবার মৃত্যুর পর রেজিয়ার আশ্রয় হয় নানী লতিফুন নেছার বাড়িতে। নানী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার ও তার লেখাপড়ার খরচ বহন করত। শত কষ্টের মাঝেও চলছিল তার লেখাপড়া। হঠাৎ করে রেজিয়ার মা সাহিদা খাতুন তার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু বাধ সাধেন কিশোরী মেয়েটি। সাফ মাকে জানিয়ে দেয়, এ বিয়ে করবে না সে। লেখাপড়া শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। কিন্তু রেজিয়ার মা এ বিয়ে জোর করে হলেও দিবেন। তার নানীর বাধাও শোনেনি সাহিদা খাতুন। সে মেয়েকে বিয়ে দিবেই। বিয়ের সকল আয়োজন শেষ। বর আসবেন রাতে। এ ঘটনার পর রেজিয়া শিশু বিবাহ থেকে রেহাই পেতে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় বোনের বাসায় চলে যায়। যাওয়ার আগে রেজিয়া একটি চিঠি লিখে যায়। সেখানে সে লিখেছিল- নানী তুমি চিন্তা কর না, আমি ভাল আছি। আমি আমার মায়ের চাপে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। বাড়িতে থাকলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিত। আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটি মহাপাপ জেনে তা করিনি।
এ দিকে আদিতমারীতে কমরত একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর এতিম শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের সদস্য ছিল রেজিয়ার নানী লতিফুন নেছা। ঘটনাটি জানার পর সংগঠনটি রেজিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের হস্তক্ষেপে কিশোরী মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর সংগঠনটির পক্ষ থেকে রেজিয়াকে মাসিক ৫শ টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি ও ব্যবসার জন্য আঠার হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
নিজে স্কুল ছাত্রী হয়েও গ্রামে শুরু করে প্রাইভেট পড়ানোর। এখান থেকে রেজিয়ার প্রতি মাসে ৫শ টাকা করে আসতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে পাওয়া আঠার হাজার টাকা দিয়ে নানীর বাড়ির পার্শ্বের একটি পুকুরে মাছ চাষ, দু’টি ছাগল ক্রয় এবং হাঁস- মুরগী পালন ও সবজি চাষ শুরু করেছে। এখান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে নানী-নাতনির সংসার কোন রকম চলে যাচ্ছে। এত কিছুর পরেও থেমে নেই রেজিয়ার মা সাহিদা খাতুনের হুমকি।
রেজিয়ার নানী লতিফুন নেছা জানান, রেজিয়া মোর নাতনী নয়, এটা মোর ছাওয়া। মুই ভিক্ষা করি হইলেও ইয়াক পড়া পড়াইম। তিনি রেজিয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।