হাসপাতাল ছেড়েই লড়াই শুরু শর্মিলার
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১৫:২০
ষোল বছর ধরে অনশন করে জওহরলাল নেহরু হাসপাতালেই আস্তানা গেড়ে বসেছিলেন মণিপুরের লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু। ৯ আগস্ট দীর্ঘতম এই অনশন ভাঙার পরে জামিনে মুক্তি মিললেও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদে তিনটি স্থানে রাত কাটাতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু ১৮ দিনের মাথায় পাল্টে গেলো দৃশ্যপট। এক সময় যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারাই আবার সমর্থন দিতে শুরু করেছেন। নারীদের সমর্থন নিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর একটি জনসভাও করেছেন তিনি।
হাসপাতাল থেকে সোজা মেইতেইদের ক্ষমতার প্রতীক কাংলা দুর্গে গিয়েছিলেন লৌহমানবী। সেখানে শক্তির দেবতা ইবুধৌ পাখংগার আশীর্বাদ নেন। জানান, ২১ বছর পরে কাংলায় এলেন তিনি। মুক্ত আকাশের নীচে কাংলার সবুজ ঘাসজমিতে বকেদের ঘুরে বেড়ানো দেখে শর্মিলা উচ্ছাস চাপতে পারেননি। কিন্তু ষোল বছরের অনশন ভেঙে ভোটে দাঁড়ানো ও বিয়ে করতে চাওয়ার কথা বলায় তার এক সময়ের অনুগামী শর্মিলা কানবা লুপের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হন। ক্ষিপ্ত হয় মণিপুরের আম জনতাও। একা হয়ে গিয়েছিলেন শর্মিলা।
তবে শর্মিলার আফস্পা-বিরোধী লড়াইয়ের সহযোদ্ধা বাবলু লোইতংবাম ও তার সঙ্গিনীরা অবশ্য তার সঙ্গ ছাড়েননি। তারাই হাসপাতালে তাকে আগলে রাখেন। তাদের মতে, অনশন ভাঙলেও এত দ্রুত ভোটে দাঁড়ানো ও মুখ্যমন্ত্রী হতে চাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করাই চানুর ভুল পদক্ষেপ ছিল। তাছাড়া শর্মিলার প্রেমিক ডেসমন্ডের তরফ থেকেও কোন বার্তা আসেনি। হতাশ চানু তাই বলেছিলেন, মানুষ হয়তো তার মৃত্যুতেই শান্তি পাবে। রাজ্যত্যাগীও হতে চেয়েছিলেন অভিমানী এই নেত্রী।
অবশ্য খুব বেশিদিন হতাশায় থাকতে হয়নি এই লৌহমানবীকে। গত ২৩ আগস্ট শর্মিলা আদালতে এলে ফের তার সমর্থনে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড-সহ আসেন মানুষ, ভরসা ফেরে শর্মিলার।
কাংলার পরে গন্তব্য ছিল কেইশামথংয়ের সানা জন্মস্থান ক্লাবে মহিলা সংগঠনের সংবর্ধনা সভা। জামিনে মুক্তির দিন ওই এলাকায় যে নারীরা শর্মিলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর ছিলেন তারাই এবার সমর্থন দিলেন, হাত মেলালেন।
পরে সংবর্ধনা সভায় ভাষণে তিনি জানান, আজ থেকে সরকার পরিবর্তন ও আফস্পা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে মানুষকে একজোট করার লড়াই শুরু হল। শীঘ্রই তিনি নিজের দপ্তর খুলবেন। বলতে গেলে, এটাই ছিল শর্মিলার প্রথম জনসভা।
আপাতত কয়েক দিন লাঙ্গোলে ইসকনের নেচার কিওর আশ্রমে কাটানোর পরে উখরুল যাবেন শর্মিলা। সেখানেও দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে ফের শুরু হয়েছে আফস্পা-বিরোধী আন্দোলন। এরপর চণ্ডীগড়ে হওয়া যুব সমাবেশে অংশ নেবেন, দিল্লি-সহ দেশের অন্যান্য অংশেও যাবেন বলে জানিয়েছেন ইরম শর্মিলা।
উল্লেখ্য, মালোমে আধাসেনার গণহত্যার প্রতিবাদে ২০০০ সালের ৪ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন ইরম শর্মিলা চানু। আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ তখন তাকে গ্রেফতার করে। তখন থেকেই ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে একতলার সিকিওরিটি ওয়ার্ড ছিল চানুর দ্বিতীয় ঘর। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, আফস্পা না উঠলে আর নিজের ঘরে ফিরবেন না। তাই অনশন ভাঙার পরেও ঘরে ফেরেননি।
এদিকে অনশন ভাঙলেও রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করেনি এখনও। রাজ্য সরকার ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এত দিনের অনাহারের পরে শরীর বাইরের ধকল নেওয়ার উপযুক্ত হলে তবেই চানুকে ছাড়া হবে। মামলার পরের শুনানি হবে ৫ সেপ্টেম্বর।