'স্বপ্ন দেখায় যেখানে বিভেদ নেই, আমরা কেন বিভেদ করি?'

প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৯, ২০:৪৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

নারী ও পুরুষের তথাকথিত পেশাগত পার্থক্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুরুষদের চুল দাড়ি কাটছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের বানওয়ারি তোলা গ্রামের দুই বোন নেহা ও জ্যোতি। সম্প্রতি তাদের সেলুনে যান ভারতের ক্রিকেট জগতের লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। ইন্সটাগ্রামে শচীনের ছবির পরেই ভাইরাল হয়েছে এই সাহসী দুই বোনের কথা।

মূলত নেহা ও জ্যোতির বাবা ছিলেন একজন নাপিত। গ্রামের একটি ছোট্ট সেলুন থেকে আসা আয় দিয়েই সংসার চলতো এই পরিবারের। কিন্তু ২০১৪ সালে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে চোখে অন্ধকার দেখে পরিবারটি। তবে হার না মেনে আর নারী পুরুষের পেশাগত বৈষম্যকে অস্বীকার করে দুই বোন নিজেরাই ক্ষুর, কাঁচি নিয়ে নেমে যান নাপিতের কাজে। সেই আয়ে শুধু পরিবারের ভরণপোষণ নয় বরং নিজেদের লেখাপড়া এবং বাবার চিকিৎসা সবই চালাচ্ছেন নেহা ও জ্যোতি।

সম্প্রতি তাদের এই দোকানে গিয়ে সেবা গ্রহণ করেছেন ক্রিকেটের ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার। ৩ মে (শুক্রবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা একটি ছবিতে নেহা ও জ্যোতিকে গভীর মনযোগে চেয়ারে বসা শচীনের দাড়ি কামাতে দেখা যায়। ছবিটি পোস্ট করে শচীন লিখেন, “আপনারা হয়তো জানেন না, আমি আগে কখনো অন্য কাউকে দিয়ে দাড়ি কাটাইনি। আজ এই রেকর্ড ভেঙে গেল। #বারবারশপগার্লস এর সঙ্গে দেখা করতে পারা সত্যিই সম্মানের।”

শচীনের এই পোস্টেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যান এই দুই বোন। ২৩ ঘণ্টায় পোস্টটিতে আট লাখ ৭৭ হাজারেরও বেশি ‘লাইক’ পড়েছে। তাতে ‘কমেন্ট’ করেছেন আঠারোশ' এরও বেশি মানুষ। 

শুধু ছবিই নয় লেখাপড়া এবং পেশাগত প্রয়োজনের জন্য নেহা ও জ্যোতিকে বৃত্তিও দিয়েছেন শচীন। তিনি বলেন, “আশা করি নেহা, জ্যোতির অসাধারণ সাহস এবং প্রথা ভেঙ্গে সামনে অগ্রসর হওয়া দেখে তাদের গ্রামের আরও অনেক শিশু অনুপ্রাণিত হবে।”

সম্প্রতি এই দুই বোনের জীবন অবলম্বনে ভারতে একটি বিজ্ঞাপনও নির্মিত হয়েছে যা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। ইউটিউবে বিজ্ঞাপনটি দেখা হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বার। বিজ্ঞাপনটির একটি চমৎকার লাইন হচ্ছে: “ক্ষুর তো আর জানে না তাকে কোন নারী চালাচ্ছে নাকি পুরুষ”।

শচীন নিজেও মনে করেন এটিই এই বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

তিনি বলেন, “যেখানে স্বপ্ন দেখায় বিভেদ নেই সেখানে আমরা কেন বিভেদ করি?”

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত