এক অনুপ্রেরণীয় নারীর গল্প
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০১৮, ২৩:৫৪
নারীর অনুপ্রেরণা, নারীর শক্তি একজন নারীই হয়। এমন কেউ, যে কিনা একটি মেয়ের এগিয়ে চলার শক্তি, নিজেকে চেনার শক্তি, নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করতে। তেমনি একজন নারীশক্তির উদাহরণ 'নাইমা মারিয়াম'। যিনি নিজের উদ্যম, সদিচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজের পরিচয় অর্জন করেছেন।
১৬ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন নাইমা। বাংলাদেশে স্কলাস্টিকা স্কুলে 'এ লেভেল' পড়ার মাঝেই আমেরিকায় চলে যান। সেখানে 'ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি' থেকে 'ফিন্যান্স এন্ড কর্পোরেট কমিউনিকেশন' এর উপর ডিগ্রি নেন। ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি থেকে 'ক্রিয়েটিং এক্সিলেন্ট অর্গানাইজেশন প্রোগ্রাম' এর জন্য সার্টিফিকেট অর্জন করেন। তারপরই আমারিকার 'ওয়াল স্ট্রিট'-এ হোয়াইটপাইন অর্গানাইজেশনে 'সিনিয়র এসোসিয়েট' হিসেবে কর্মরত হন। কয়েক বছর তিনি একা মেয়ে হিসেবে কাজ করেন ছেলেদের পাশাপাশি এবং নিজের পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতা দিয়ে নিজের একটা অবস্থান তৈরী করে নেন। আমেরিকার একটি বিখ্যাত কোম্পানিতে নিজের একটা জায়গা করে নেওয়া একটা মেয়ের জন্য অবশ্যই সহজ কিছু ছিলো না। কিন্তু ওনার বস একজন নারী ছিলেন এবং তাকে দেখেই তিনি উদ্বুদ্ধ হন যে একটা মেয়ে চাইলেই পারে।
বাংলাদেশের মত সেখানেও পুরুষশাসিত ব্যাপারগুলো চোখে পড়ে তার। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস আর মনের জোর নিয়ে তিনি কাজ করে যান নির্বিঘ্নে। সেখানে স্টকমার্কেটে ব্যবসা করেন এবং ওয়াল স্ট্রিটে একটা বড় পদে জায়গা করে নেন। ভালোই তো ছিলেন তিনি, কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়! প্রায় ২০ বছর বিদেশে থাকার পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওনার বাবার এক কথায় ২০১৬ তে দেশে চলে আসেন। তার বাবা বলেছিলেন মা, দেশে চলে এসো, এখানে অনেক কিছু করার আছে। সেই অনেক কিছুর মধ্যে ওনার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের মেয়েদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
দেশে এসে তিনি লক্ষ্য করেন পুরুষশাষিত এই সমাজে মেয়েদেরকে প্রতি পদক্ষেপে কিভাবে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। কখনো পরিবারের সাথে, কখনো সমাজের সাথে, কখনো নিজ কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় সবখানে। আর কেউ কেউ নিজের সাথেই যুদ্ধ করতে করতে হাল ছেড়ে দেয়। নিজের প্রতিভা, গুণগুলো বিকশিত করার সুযোগ না পেয়ে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। তিনি নিজেও যে কোন বিপত্তির শিকার হননি তা কিন্তু নয়। তাই এই জায়গাগুলো থেকে যেন মেয়েরা নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে, নিজের শিক্ষা, জ্ঞানকে যেন প্রসারিত করতে পারে তার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন নাইমা।
দেশে এসেই তিনি 'ডিজিটাল হাব বাংলাদেশ লিমিটেড' কোম্পানিতে প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজের পাশাপাশি সেখানে তিনি মেয়েদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে। কিভাবে কর্মক্ষেত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়, কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে সকল পরিবেশে যেকোনো পরিস্থিতি কিভাবে আয়ত্বে আনতে হয় সব কিছু তিনি মেয়েদের শেখাচ্ছেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। নিজের সুপ্ত প্রতিভাগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করে কিভাবে আরও বিকশিত করা যায় তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরত। ওনার অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে যেন সবাই কিছু পেতে পারে তার কাছ থেকে। শেখার কোন শেষ নেই, সবাই সবার কাছ থেকে শিখতে পারে, এই সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা নিয়েই তার পদক্ষেপ। তিনি চান ছেলেদের পাশাপাশি প্রতিটা মেয়েই যেন এগিয়ে যায় নিজের মত করে। কারও প্রতি নির্ভরশীল হয়ে নয়, কারও মেয়ে বা স্ত্রী হয়ে নয় বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে পারে।
আজ বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে, যেটুকু পিছিয়ে আছে সেই জায়গা থেকেই বের করে আনা তার একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। কয়জন পারে বিদেশে অর্জিত এত বড় চাকুরী, বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে নিজের দেশকে ভালোবেসে, দেশের মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মহান উদ্যোগ নিয়ে দেশে ফিরে আসতে! তিনি নারীদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক, জ্বলন্ত আরেকটি উদাহরণ। এরকম একজন মহৎপ্রাণ, উদ্যমী নারীই তো হতে পারে নারীর অনুপ্রেরণা, নারীর শক্তি।