শিশু জয়নাব ধর্ষণ: সংবাদপাঠিকার অভিনব প্রতিবাদ!
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:১৫
সাত বছরের শিশু জয়নাবকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় গোটা পাকিস্তান এখন ফুঁসছে। পাকিস্তানের সর্বস্তরের মানুষ দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিবাদের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম সামা টিভির সঞ্চালিকা কিরণ নাজ।
ভারত সীমান্ত থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত পাকিস্তানের কসুর শহরটি। সেখানেই গত ৪ জানুয়ারি টিউশন থেকে ফেরার সময় নিখোঁজ হয় যায় সাত বছরের জয়নাব। সেই সময় মেয়েটির বাবা-মা হজ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মেয়েটি একটি অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছেন। ৮ জানুয়ারি মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয় জঞ্জাল থেকে। দেহের ময়নাতদন্ত করে জানা যায়, মেয়েটিকে হত্যা করার আগে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছিল।
এমন নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে নিজের ছোট বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে সংবাদ পড়তে হাজির হন কিরণ নাজ। বুলেটিনের শুরুতে কিরণ বলেন, আজ তিনি একজন সংবাদপাঠিকা নন, একজন মা হিসেবে খবর পড়তে বসেছেন। আর সাত বছরের মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড দেখে তিনি এতটাই আতঙ্কিত যে মেয়েকে বাড়িতে একলা রেখে কাজে আসতেও তিনি ভয় পাচ্ছেন। তাই তাকে সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন তিনি।
জয়নাবের ধর্ষণ ও হত্যার কথা উল্লেখ করে সঞ্চালিকা কিরণ বলেন, সৌদি আরবে যখন মেয়েটির বাবা-মা তাদের সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা করছেন, খেলনা কিনছেন, তখন কোনও এক দানব তার লালসা চরিতার্থ করতে তাকে ছিঁড়ে খেয়ে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে দিয়েছিল জঞ্জালে। এটা কোনও শিশুর ধর্ষণ ও হত্যা নয়, এই ঘটনায় খুন করা হয়েছে গোটা সমাজকে।
তিনি আরও বলেন, গোটা ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হবে, কমিশন বসবে, কিন্তু সত্যি এটাই বিচারের দিনে ঈশ্বরকে এই মেয়েটিই প্রশ্ন করবে, তার কী দোষ, কেন তাকে হত্যা করা হল?
নাজ মন্তব্য করেন, এখানে কোনও একটি মেয়ের মৃত্যু হয়নি, গোটা মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়েছে।
নাজের দেড় মিনিটের এই বুলেটিন অনেকেরই চোখে জল এনে দেয়।
এদিকে বুধবারই দেশে ফিরেছেন জয়নাবের বাবা। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়ের দেহ সমাধিস্থ করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকি সাত বছরের মেয়েটির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তান যে বুধবার সেখানকার পাঞ্জাব প্রদেশে প্রতিবাদ চলাকালে পুলিশের গুলিতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
প্রসঙ্গত, কসুর শহরে এই নিয়ে গত একবছরে এধরনের ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০১৫ সালে কসুর খবরের শিরোনামে আসে, কারণ সেখানে একটি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। যারা প্রায় ২৮০ জন শিশুকে অপহরণ করে যৌন হেনস্থা চালিয়েছে ও ভিডিও রেকর্ডিং করেছে। তারপর আক্রান্তদের পরিবারের থেকে সেই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রচুর টাকা রোজগার করেছে।