বুক রিভিউ

ব্যতিক্রমী অতিপ্রাকৃত উপন্যাস: ডাইনী

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৪৯

সামারা তিন্নি
রিভিউ লেখক ও বইয়ের প্রচ্ছদ

ইংরেজি বই এর ফাঁদে পড়ে অনেকদিন নতুন বাংলা বই পড়া হয় না। গত বছর যতগুলো বাংলা বই পড়েছি তার প্রত্যেকটা আগেই নিদেনপক্ষে দুইবার করে পড়া ছিল। যা হোক, ২০১৯ শুরু হলো আমার একটা টাটকা নতুন বাংলা বই দিয়ে - ডাইনী; লেখিকা সালমা সিদ্দিকা। এই বইয়ের নাম আমি শুনেছি, কিন্তু পড়া হয়নি। আমার কাজ কারবার প্রাচীনকালের মানুষের মত। ফেসবুকে উপন্যাস পড়তে পারি না, বইয়ের জন্য দরকার হলে বছর ধরে অপেক্ষা করি।

বইটা হাতেও এসেছে আকস্মিকভাবে। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলা বই চাইলেই পাওয়া সম্ভব নয়, সুতরাং আমিও কিনতে পারিনি। গত মাসে সিডনি গেলে পরে ছোটন আপু বইটি ধার দিয়েছেন, সেটা আপাতত আমার বাসার বুকশেলফে শোভা পাচ্ছে। এই বছর সিডনি গেলে তখন ফেরত দেয়া হবে। ভূমিকা শেষ, এবারে মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।

'ডাইনী' একটি অতিপ্রাকৃত ঘরানার উপন্যাস। তবে তথাকথিত হরর উপন্যাস এটিকে বলা যাবে না। নিজস্ব অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া এতে খাঁটি ভূতুড়ে কারবারের কোন বর্ণনা নেই। প্রথম পুরুষে লেখা এই বইটি মূলত একজন ডাইনীর আত্মজীবনী। তার ভাষায়, পৃথিবীর অল্প কিছু মানুষের দখলে কিছু অলৌকিক ক্ষমতা থাকে। কিছু ক্ষমতা ঐশ্বরিক, কিছু ক্ষমতা অভিশপ্ত। এই দ্বিতীয় দলের মেয়েদের ডাকা হয় ডাইনী। তারা কালা জাদু করতে পারে, কোন প্রমাণ না রেখে মানুষকে মেরেও ফেলতে পারে যদি সেই পরিমাণ শক্তি অর্জন করতে পারে। তবে সবচেয়ে কঠিন ক্ষমতা হচ্ছে চির যৌবন ধরে রাখা, শরীরে আর মনে। তার জন্য প্রয়োজন হয় এক বিশেষ পুরুষ সঙ্গীর - তামালিক। তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে ভালোবাসা/স্নেহ/মমতা ধরণের মানবিক গুণাবলী। ক্ষমতা হারানোর জন্য একটি অনুভূতিই তাদের জন্য যথেষ্ট। ডাইনীর প্রধান যুদ্ধটি তার নিজের সাথে - মানবিক গুণাবলী যেন প্রস্ফুটিত না হতে পারে তার চেষ্টায়। চির যৌবন লাভের উন্মাদনায় উপন্যাসের ডাইনী একজনের পর একজন মানুষকে তার জীবনের সাথে জড়ায় আবার সরিয়ে দেয় তার খেয়াল খুশি মত। তারপরেও অদ্ভুত সারল্য মাখা এক চোখকে উপেক্ষা করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটা বললে স্পয়লার হয়ে যাবে, তাই আর বললাম না।

আমি লেখিকার আগে আর কোন লেখা পড়িনি, সুতরাং বলা যেতে পারে এই লেখা দিয়েই তার সাথে পরিচয়। অসম্ভব ঝরঝরে এবং প্রাঞ্জল লেখা। কোথাও ঠেকে যাবার তেমন কোন উপায় নেই। ব্যতিক্রমী প্লট যেটা পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে না। আমি নিজে হরর গল্পের অন্ধ ভক্ত বলে দ্বিগুণ আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়েছি। গল্পের এই 'তামালিক' তত্ত্ব সম্পর্কে আমি আগে জানতাম না। ধারণাটি পছন্দ হয়েছে। বই সম্পর্কে নেগেটিভ কিছু বলার নেই, কিন্তু পাঠক অনুযায়ী নিজস্ব মতামত আছে। শেষ তামালিকের সাথে বর্ণনার শেষটাকে আরো এক-দুইটি পৃষ্ঠা দিলে ভালো হতো। তাতে আরো তৃপ্তি পেতাম আবেগের স্তরগুলো সব বুঝতে পেরে। শেষ বাক্য হচ্ছে, বইটি হাইলি রিকমেন্ডেড। বিশেষ করে যারা অতিপ্রাকৃত গল্প পছন্দ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত