মন্ত্রিত্ব ছাড়তে পারেন তারানা হালিম
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:৫২
মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে পারেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম! গত দুই সপ্তাহ ধরে এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। বেশকিছু বিষয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রভাবশালী একাধিক পক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে নিজেকে সরিয়েও নিতে পারেন তিনি।
জানা গেছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক কলরেট নির্ধারণ নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রভাবশালী একাধিক পক্ষের সঙ্গে তারানা হালিমের মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী জানুয়ারি মাসে মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি বা এমএনপি সার্ভিসের জন্য নতুন অপারেটর নিয়োগে নিলাম অনুষ্ঠানের আগেই তিনি পদ থেকে সরে যাচ্ছেন, সে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত এক বছরে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে বেশকিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিশেষ করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধনের ফলে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে অবৈধ আন্তর্জাতিক কল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে আন্তর্জাতিক কলরেট নির্ধারণকে গুরুত্ব দেওয়াটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। এই মহলই এ ধরনের গুঞ্জন ছড়াতে পারে। তবে গুঞ্জন গুঞ্জনই। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন তিনি। তার প্রতি পুরোপুরি আস্থা রয়েছে আমার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাই কাজ করতে এসেছিলাম। সততার সঙ্গে কাজ করেছি। পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা করে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করিনি, করবও না। এ জন্য প্রয়োজনে দায়িত্ব ছাড়তে হলে ছাড়ব।
একাধিক সূত্র জানায়, তারানা হালিমের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার গুঞ্জন প্রবল হয়েছে সর্বশেষ বিটিসিএলের এমডি নিয়োগের পর থেকে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে ছিলেন তারানা হালিম। গত বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিটিসিএলের এমডি হিসেবে দুবছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ। প্রায় এক বছর আগে বিটিসিএলের ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে অবসরে গিয়েছিলেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গতবছর মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ অবসরে যাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কর্মরত বিটিসিএলের সাবেক কর্মকর্তা গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের পছন্দে বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিটিসিএলে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিটিসিএলের ভেঙে পড়া আর্থিক কাঠামোও চাঙ্গা হয়। তারপরও গত মে মাসে গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হয় এমডি পদ থেকে।
সূত্র জানায়, গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদের চলে যাওয়া এবং মাহফুজ উদ্দিন আহমেদের নিয়োগের মধ্য দিয়েই টেলিযোগাযোগ খাতের প্রভাবশালী চক্রের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এরপর থেকেই তার মন্ত্রিত্ব ছাড়ার গুঞ্জন ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে।
সূত্র জানায়, শুধু বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ নয়, আরও কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তারানা হালিমের মতবিরোধ চরম পর্যায়ে। তারানা হালিম দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই প্রভাবশালী মহল নিজেদের ফোরাম গঠন করে ফোরামের সুইচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তাদের সঙ্গে তারানা হালিমের মতানৈক্য সৃষ্টি হয় এবং তাদের বিরাগভাজন হন তিনি।
সূত্র আরও জানায়, বিটিসিএলের এমওটিএন প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় নির্ধারণের ব্যাপারে আপত্তি তোলে, ঢাকা-কুয়াকাটা ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনে বৈধ টেন্ডার বাতিল করা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানির কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশযাত্রা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েও অনেকের বিরাগভাজন হন তারানা হালিম। এ ছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন এবং টেলিটক ও ডাক বিভাগকে লাভজনক করার উদ্যোগ নিয়েও তিনি টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েন।