নিজের জমিতে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট বিক্রি করেও বিপাকে স্ত্রী-স্বামী
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৪
ঢাকার গোলাপবাগে নিজের জমিতে ডেভেলপার দ্বারা নির্মিত ফ্ল্যাট বিক্রি করে মো. মফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী ভয়াবহ বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ওয়ারিশ সূত্র ও ক্রয় সূত্রে যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের ১৭/১/এ জমিটির মালিক ভুক্তভোগী মফিজুর ও তাঁর স্ত্রী। জমিটিতে দশ তলা ভবন করার জন্য তারা ২০২১ সালের ৮ আগস্ট এইচ টু বিল্ডার্স আ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আম মোক্তার নামা দলিল (৬১১৭) করেন। চুক্তি অনুযায়ী ভবনে নয়টি ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা তার। সেই নয়টি ফ্ল্যাটের দুটি ফ্লাট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রেতা শামসুন্নাহারের কাছ থেকে দুই কিস্তিতে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির শর্তানুসারে এবং মালিক পক্ষের আপোষ বন্টননামা না হওয়ার কারনে ডেভেলপার কোম্পানি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারেনি ফলে ফ্লাট মালিক মফিজুরও বিক্রি করা দুটি ফ্লাট শামসুন্নাহারকে হস্তান্তর করতে পারেন নি। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে মফিজুর শামসুন্নাহারকে ২৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে চান। তবে তিনি অর্থ ফেরত না নিয়ে তাঁকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে হুমকি দিতে থাকেন।
ভুক্তভোগী মো. মফিজুর রহমান ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা। ফ্ল্যাট ক্রেতা শামসুন্নাহারও একই এলাকার বাসিন্দা।
১০ তলা ভবন নির্মাণ ও ফ্লাট হস্তান্তরের জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মফিজুর জানান, আমি চুক্তির শর্ত না বুঝে ১২০০ স্কয়ার ফিটের দুটি ফ্লাট বিক্রয়ের জন্য শামসুন্নাহারের কাছ থেকে দুই কিস্তিতে মাত্র ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করি। কিন্তু ফ্লাট যেহেতু দিতে পারছি না সেহেতু অর্থ ফেরত দিতে চাইলে উনি টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আমাকে ফ্লাট বুঝিয়ে দিতে হুমকি দেন। দুইদিন পর পরই তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর শামসুন্নাহার অজ্ঞাত ২-৩ জন ব্যক্তিকে এনে আমার সঙ্গে ভয়ঙ্কর খারাপ আচরণ করেন এবং মারতে উদ্যত হন। শামসুন্নাহারের পক্ষে তাঁর ভাই জমীর আলী ও তাদের ছেলেরাও নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি সমাধানে আমি আইনগত সহযোগিতা চাই।
এদিকে ফ্লাট ক্রেতা শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ আছে। তিনি ২২/খ গোলাপবাগ, যাত্রাবাড়ীতে একতলা ভবনের উপরে রাজউকের নিয়ম ও নকশা বহির্ভূতভাবে ৩ তলা ভবন নির্মাণ ও ৪ তলার কাজ চলমান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগও জমা পড়েছে। খেয়ালখুশি ভবন নির্মাণের কারণে যে কোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে জানতে শামসুন্নাহা্রের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সারা পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও শামসুন্নাহারের ভাই মোঃ জমির আলীও রাজউকের নিয়ম ও নকশা বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করেছেন। ১৮/৫ গোলাপবাগ, যাত্রাবাড়ীতে এক তলা পুরাতন ভবনের উপর নির্মাণ করেছেন আরো পাঁচ তলা। বিষয়টি নিয়ে রাজউকে অভিযোগের পর প্রতিষ্ঠানটি তাঁর বিরুদ্ধে নোটিশও জারি করেছে।
নিয়ম ও নকশা বহির্ভূতভাবে ঝুকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে গোলাপবাগ এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজউকের ইমারত পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন ফোনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে রাজউকে একাধিকবার গেলেও তাঁকে পাওয়া যায় নি।
স্থানীয়রা জানান, গোলাপবাগ এলাকায় নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে নকশা বহির্ভূতভাবে বেশকিছু ভবন তৈরি হয়েছে। বেশীরভাগই পুরাতন ভবনের উপর এসব ভবন তৈরি হয়েছে। রাজউকের ইমারত পরিদর্শকরা অর্থ নিয়ে এসব নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয় না। রানাপ্লাজার মত একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটলেই হয়ত তাদের টনক নড়বে।