ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৪
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন ধারণা “রেস্টোরেটিভ জাস্টিস”। এই বিষয়টিকে সুদূরপ্রসারী করার লক্ষ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে “ভিক্টিমোলজি এন্ড রেস্টোরেটিভ” জাস্টিস বিষয়টি সমাজ কল্যাণ বিভাগের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিষয়টির মূল লক্ষ্য অভিযোগকারী এবং অপরাধীর মধ্যে দুরত্ব কমিয়ে আনা। এই প্রক্রিয়া সমাজে সংঘটিত ছোট থেকে বড় অপরাধমূলক এবং ক্ষতিকর ঘটনাগুলোর সমাধানের পথে নিয়ে আসতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
“রেস্টোরেটিভ জ্যাস্টিস” হল আদালতের বাইরেও নিরোধ নিষ্পত্তির একটি নতুন এবং নান্দনিক ধারণা। এই শব্দটির উৎপত্তির সময়কাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধরে নেওয়া হয় ১৯৭৭ সালের দিকে এই ধারণার উদ্ভব হয়। বাংলাদেশে এর ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যাশিত কারণ, এটি অধ্যায়নের মাধ্যমে জনসচেতনতা যেমন বাড়বে তেমনি বিষয়টির মূল লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে ধারণা বিস্তার লাভ করবে। অপরাধ দমনের পূর্বে অপরাধটি যেন না ঘটে সেই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে অপরাধীর প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান এড়িয়ে সামাজিক সালিশী ব্যবস্থাকে জোড়দার করতে হবে, তবে অবশ্যই নমনীয়ভাবে। জন্ম থেকেই কেউ অপরাধী হয় না, সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক জটিলতা, বন্ধুমহলের প্রভাব, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন কারণে একজন মানুষ অপরাধ করতে পারে।
কিন্তু অপরাধীকে শুধুই অপরাধী বিবেচনা না করে তার পিছনে কারণ উদঘাটন, তার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ এবং সঠিক পরামর্শ তার অপরাধী মনকে বদলে দিতে পারে। যাকে আইনের ভাষায় (Guilty Mind) বলে। আর “ভিকটিম” অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকেই এটা বুঝতে হবে শুধুমাত্র শাস্তি বা প্রতিশোধপ্রবণতা একজন মানুষকে সংশোধন করতে পারে না। আপোষ মিমাংসার মাধ্যমেও অপরাধকে অবদমিত করা যায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অপরাধ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে শুধু শাস্তির ব্যবস্থা দিয়ে অপরাধ কমানো সম্ভব না। এই বিষয়টির মর্মার্থ সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌছে দিতে হবে। বিষয়টি অধ্যায়নের মাধ্যমে নিজেকে জানতে হবে, জানাতে হবে সমানভাবে। ন্যায়বিচার পুনরূদ্ধার করতে তৎপর হতে হবে সবার প্রথমে সাধারণ মানুষকে। কারণ, অপরাধ আর অভিযোগ দুটোই এখান থেকে আসে। সেই সাথে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও কাম্য এই ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারের সঠিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য।
লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী