নির্যাতনের শিকার ৮০ শতাংশ বিবাহিত নারীরা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৫৭
দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোন পর্যায়ে নিজের স্বামীর মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
রবিবার (২ অক্টোবর) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে নারী ‘নির্যাতন-২০১৫’ শীর্ষক হালনাগাদ এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের প্রতিবেদনে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীর হার ছিল ৮৭ শতাংশ। এ হিসেবে চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর নির্যাতন কমেছে।
অনুষ্ঠানে ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল হক সরদার জানান, ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ২২ অগাস্ট সারা দেশে ২১ হাজার ৬৮৮ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তারা। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমলেও বেড়েছে শারীরিক নির্যাতন।
২০১৫ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারী বিবাহিত নারীদের ৫০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ২৭ শতাংশ বিবাহিত নারী।
২০১১ সালে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওপর স্বামীরা নির্যাতন করেন আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীরা নির্যাতনে শিকার হওয়ার কথা বলেছেন সবচেয়ে বেশি।
জরিপে অংশ নেওয়া গ্রামের বিবাহিত নারীদের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। শহরে এই হার ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ; আর জাতীয় পর্যায়ে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থনৈতিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও জাতীয় ও গ্রামীণ চিত্র প্রায় অভিন্ন। গ্রামের ১২ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। শহরে এই হার ১০ দশকি ২ শতাংশ; জাতীয় পর্যায়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, স্বামী ও স্ত্রী শিক্ষিত হলে নির্যাতন করার প্রবণতা এবং নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা কম ঘটেছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ইউএনএফপিএ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা প্রিসিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন, পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আসলে নারী নির্য়াতন একদম বন্ধ হবে না। তবে আরও অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।”
প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি তিন মিনিটে একজন নারী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এমন তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “সে তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো। তবে আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ আছে।”
বাংলাদেশে ‘পুরুষ নির্যাতনেরও একটি জরিপ হওয়া উচিত’ বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমাতে হবে।”
বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় সহিংসতা আগের চেয়ে কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, “তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।”