মা জানেন না ছেলে আর নেই
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০১৬, ১৯:৫৩
ছেলে সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসের নিহত হওয়ার খবর এখনো জানেন না নড়াইলের বাড়িতে থাকা তার বৃদ্ধ মা। বৃদ্ধ মা চারুবালাকে ছেলের লাশ আসার খবরটা কীভাবে দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না আত্মীয়রা।
তার এক আত্মীয় জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালেই শ্যামানন্দর বাড়ি আসার কথা ছিল।
তারা জানান, শ্যামানন্দ দাসের বাবার নাম কিরণ সরকার। দুই বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শ্যামানন্দ।
বড় ভাই বিশ্বনাথ সরকার বলেন, "ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার জন্য ছোটবেলাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে শ্যামানন্দ। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম প্রদ্যোৎ সরকার। ধর্মীয় কাজে বের হয়ে নিজের নাম বদলে রাখে শ্যামানন্দ দাস। বিভিন্ন স্থানে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন শেষে তিন বছর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাষ্ঠসাগরা গ্রামের ওই মঠে সেবায়েত হিসেবে কাজ শুরু করেন শ্যামানন্দ"।
শ্যামানন্দের বৌদি তৃষ্ণা সরকার বলেন, "শ্যামানন্দ সময় পেলেই নড়াইলে চলে আসত। পরিবারের সদস্য ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করত। বৃহস্পতিবার রাতেও শ্যামানন্দের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আজ সকালেই ওর বাড়ি আসার কথা ছিল। সেই সকালেই মোবাইলে মৃত্যুর খবর পেলাম। অসুস্থ মাকে জানানো হয়নি। কীভাবে জানাব?”
বড় ভাই বিশ্বনাথ বলেন, "বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ধর্মযাজকদের হত্যা করা হচ্ছে। আগে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।”
নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুণ্ডু বলেন, "একের পর এক সেবায়েত খুনের ঘটনায় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতঙ্কিত। অনেকেই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে ভয় পাচ্ছেন। পূজারিরাও ভয় পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারের ‘আন্তরিক সহযোগিতা’ কামনা করছি"।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শ্রীশ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহের (মঠ) কাছে পূজার ফুল তোলার সময় ‘মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক’ শ্যামানন্দকে কুপিয়ে হত্যা করে। দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলার মুসুড়ি গ্রামে শ্যামানন্দের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করছেন।