পাহাড় ধসে নিহত ২৭
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৭, ১৪:৪৬
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১৩ জন, চট্টগ্রামে আটজন ও বান্দরবানে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
১৩ জুন (মঙ্গলবার) ভোররাত থেকে অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এ অভিযান এখনো চলছে।
এছাড়া রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন ও কর্ণফুলী নদীতে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। চট্টগ্রামের হালিশহরে দেয়াল ধসে একজন, চাক্তাইয়ে বজ্রপাতে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বান্দরবান ও রাঙামাটির পাহাড় ধসের এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুটি দুর্গম এলাকায় পাহড়ধসের ঘটনা ঘটায় সেখানে উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই পাহাড় ও দেয়াল ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমি ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।
রাঙামাটিতে ১১ মৃত্যু
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলায় পাহাড়ধসে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙামাটি সদর উপজেলার আবাসিক চিকিৎসক মংকু চিং জানান, ১১ জনকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেছেন। এছাড়া চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আরও ২৪ জনকে।
রবিবার গভীর রাত থেকে ১৩ জুন (মঙ্গলবার) বেলা ১১টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি চলছে রাঙামাটিতে।
চট্টগ্রামে ৮ মৃত্যু
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ আটজন নিহতের খবর জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী। এর মধ্যে চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে পাহাড় ধসে তিন শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরে আরেক পাহাড় ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়ে দুজন হাসপাতালে আছেন।
চন্দনাইশ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ১৩ জুন (মঙ্গলবার) ভোর রাতে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম পাহাড়ে দুটি ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়লে চারজনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও দুইজন।
ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড় ধসে আজগর আলীর ৩ বছর বয়েসী মেয়ে মাহিয়ার মৃত্যু হয়।
আর কাছেই ছনবনিয়া এলাকায় অপর ঘটনায় কেউ লা খেয়াং (১০), মে মাউ খেয়াং (১৩) ও মোকইউ অং খেয়াং (৫০) নামে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়।
আহত দুইজন হলেন- শানু খেয়াং (২১) ও ছেলাই কেউ খেয়াং (২৮)।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বান্দরবান জেলা সীমান্ত সংলগ্ন দুর্গম ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ঘটনাস্থলে বেলা ১২টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নিহতদের উদ্ধার করা হয় বলে সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ জানান।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড় ধসের দুটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মগাইছড়ি এলাকায় একটি ঘটনায় চার জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “রাঙামাটির কাউখালী সংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা এখনও সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। তবে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা স্থানীয়ভাবে নিশ্চিত হয়েছি।”
নিম্নচাপের প্রভাবে ১৩ জুন (মঙ্গলবার) বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৩১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
বান্দরবানে ৮ মৃত্যু
টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে ১২ জুন (সোমবার) রাতে কয়েক জায়গায় পাহাড় ধসে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা।
এর মধ্যে বালাঘাটায় ১ কলেজছাত্র, লেমুঝিরি আগাপাড়ায় একই পরিবারের ৩ শিশু, লামা উপজেলায় ১ জন ও সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাহাড় ধসের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত দুইজন। আহত অন্তত ৫ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ নিহত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। এর হলেন লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তাঁর মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং বালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)।
এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত রবিবার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।