টকশোতে সুলতানা কামাল যা বলেন (ভিডিও)
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০১৭, ০২:০৬
গত ২৭ মে অনলাইন টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪-এ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য স্থানান্তর নিয়ে ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ নামের একটি টকশো প্রচারিত হয়। ওই টকশোতে রুবায়েত ফেরদৌসের উপস্থাপনায় আলোচক হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ছাড়াও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অপু উকিল, গণজাগারণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ও হেফাজত প্রতিনিধি মুফতি সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এই টকশোতে সুলতানা কামাল এর বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেফতার অথবা 'তসলিমা নাসরিনের মতো' দেশের বাইরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে ২ জুন (শুক্রবার) জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত হেফাজতে ইসলামের এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব এই দাবি জানান।
কিন্তু কি বলেছিলেন সুলতানা কামাল সেই টকশোতে?
টকশোর শুরুতে হেফাজত নেতা মুফতি সাখাওয়াত বলেন, "কেউ ভাস্কর্য বলেন, কেউ বলেন মূর্তি। আমি মূর্তি বলি। গ্রিক গড অব জাস্টিস। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট—এই মূর্তিটি থেমিসের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি থেমিসের মূর্তি। আর থেমিস হচ্ছে গ্রিক দেবী। তারা সেটিকে উপাসনা করে, পূজা করে। আর সেই মূর্তি স্থাপিত হয়েছে, এটা কখনও কোনও মুসলমান মেনে নিতে পারেন না"।
জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, "যিনি এতক্ষণ কথা বললেন, আমি তার মতো প্রবক্তা নই। আমি যেভাবে বিষয়টি দেখি, তিনি কিছু কিছু জায়গায় খুবই গুলিয়ে ফেলেছেন। মূর্তি সেটাকেই বলা হয়, যেটা হিন্দু ধর্মের লোকজন, তাদের মধ্যে কোনও কোনও গোষ্ঠীপূজা করে। অনেকে করেও না। হিন্দুদের মধ্যেও নানা তরিকা আছে। মুসলমানদের মধ্যেও নানা তরিকা আছে। আমাদের এই উপমহাদেশে আমরা দেখি, সব জায়গায় একই মূর্তি প্রধান দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নন। সেটাও তাদের ব্যাপার। হ্যাঁ, ঠিকই তো তিনি (মুফতি সাখাওয়াত) ইসলাম ধর্ম নিয়ে যে কথা বলেছেন, একশত ভাগ সত্য। মুসলমানরা তাদের ধর্ম মানবে। কেউ তো বলছে না, সেখানে যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, সেটাকে পূজা করতে হবে বা সেটাকে মূর্তি নাম দিয়ে সামনে গিয়ে মুসলমানদের সেখানে কোনও রকম ধর্মের আচরণ করতে হবে। সে রকম কথা তো আসেনি। অনেক দিন ধরে ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে বিচারের যে প্রতীক, সেটাকে একটা জায়গা প্রতিস্থাপন করা হয়। সেখানে মানুষ সেটাকে দেখে। না থাকলেও কোনও ক্ষতি নেই। সেটা যে থাকতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। আমাদের বিষয়টি ছিল সেটাকে ধর্মের নাম দিয়ে, ধর্মকে ব্যবহার করে যেভাবে অপসারণ করা হলো, সেটা মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল, তার সঙ্গে যায় না। এটা তো ঠিকই, বাংলাদেশে শুধু মুসলমান জাতি বাস করে না। এখানে বিভিন্ন জাতের মানুষজন বাস করে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। থেমিসের যে মূর্তি এখানে স্থাপন করা হয়েছিল, এটার সঙ্গে ধর্মেরও কোনও সম্পর্ক নেই। ধর্ম দিয়ে এটাকে থাকা না থাকার তর্কগুলো তোলা হচ্ছে। যেভাবে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে, ১৩ দফা দাবি তো আমরা জানি। মেয়েদের ক্লাস ফাইভের ওপরে পড়তে দেওয়া যাবে না। হেফাজত ইসলামের যিনি সর্বোচ্চ স্তরের নেতা, তিনি নারীদের সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, আমি জানি না, ইসলামে যদি সেটার কোনও অনুমোদন থাকে, খুবই দুঃখ পেতে হবে"।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, "খুবই দুঃখজনক যে, একটা ভাস্কর্যকে মূর্তি বানানো হচ্ছে"।
"এখানে মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করা হয়েছে" বলে মন্তব্য করেন মুফতি সাখাওয়াত।
জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, "আমার কথা হলো, সেটা যদি মূর্তিও হয়, সেটা সেখানে থাকলে অসুবিধা কী? মুসলমানরা সেটা পূজা না করলেই হলো"।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুফতি সাখাওয়াত বলেন, "অসুবিধা আছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত"।
"তার মানে কি কিছুই থাকবে না?" বলে প্রশ্ন রাখেন সুলতানা কামাল। এর উত্তরে সাখাওয়াত বলেন, "সব থাকবে"।
সুলতানা কামাল বলেন, "তাহলে তো মসজিদও থাকার কথা না"। এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মুফতি সাখাওয়াত বলেন, "এই মূর্তি সাম্প্রদায়িক। আদালত প্রাঙ্গণের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোনও সাম্প্রাদায়িক কিছু থাকতে পারে না"।
সুলতানা কামাল বলেন, "থাকতে পারে, ওখানে ঈদগাহও আছে কেন? সেখানে যদি মসজিদ থাকতে পারে, মূর্তি থাকতে পারবে না কেন?"
মুফতি সাখাওয়াত বলেন, "মসজিদ থাকবে, মুসলমানরা সেখানে নামাজ পড়বে, হিন্দুরা তাদের মতো করে পূজা করবে। ইসলামের এ জায়গায় বক্তব্য স্পষ্ট—কোনও ধর্মের ওপর আঘাত হোক, ইসলাম সেটা বরদাশত করে না"।