এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম চালুর জন্য শ্রমিক-মালিকের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১৩ মে ২০১৭, ১০:২৬
শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে দীর্ঘ মেয়াদী ও টেকসই এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কীম চালুর জন্য মালিক এবং শ্রমিক সংস্থাগুলোর কার্যকর সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উৎপাদন জোরদার করতে শ্রমিকদের প্রতি মালিকপক্ষকে আরো সহানুভূতিশীল হবারও আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা শ্রম দিয়ে কলকারখানাগুলো সচল রেখে উৎপাদন বাড়াচ্ছেন সেইসব শ্রমিকদের কল্যাণে আমি মালিকপক্ষকে আরো সহানুভূতিশীল হতে বলবো।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমি চাই শ্রমিকরাও যে সব কলকারখানা থেকে তাঁদের জীবন-জীবিকার কর্মসংস্থান হয় সেগুলো সচল রাখতে আরো আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
১১ মে (বৃহস্পতিবার) সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রম মন্ত্রণালয় সস্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। তৈরি পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় আমরা তা উপলব্ধি করেছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হলো দীর্ঘ মেয়াদী ও টেকসই এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম চালু করা। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। এক্ষেত্রে জার্মান সরকার ও আইএলও আমাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যেিচ্ছ।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিগণ জার্মানির এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের উপযোগী এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার মাধ্যমে শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান সহজ হবে। এ বিষয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
যেকোন শ্রমিক দুর্ঘটনার কারণে বা পেশাগত রোগ-ব্যাধির কারণে মৃত্যুবরণ করলে বা কর্মক্ষমতা হারালে তাঁদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের বিধান বাংলাদেশ শ্রম আইনে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপের আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো অকুপেশনাল ডিজিস হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হাসপাতালে ৩৩ শতাংশ শয্যা শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য রিজার্ভ থাকবে এবং শ্রমিকরা কম খরচে এ হাসপাতালে পেশাগত রোগ ব্যধির চিকিৎসা নিতে পারবেন।
শ্রম আইন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠন, তহবিলে স্থিতির পরিমান ৮ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করণ, তহবিল থেকে ১ হাজারের বেশি শ্রমিককে সাড়ে ৫ কোটি টাকা প্রদানসহ শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছে। কারণ আমাদের রাজনীতিই হচ্ছে এদেশের গরীব মেহনতি মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, ‘দোয়া করবেন যেন আপনাদের সেবা আমরা করে যেতে পারি, আপনারা দেশের সেবা করে যাবেন আমরা আপনাদের সেবা করে যাবো।’
তিনি বলেন, উন্নয়ন ও উৎপাদনের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, দেশ গঠনে যারা জড়িত, যারা শ্রম দিচ্ছে, যারা খেটে খাচ্ছে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, তাদের পরিবার যাতে অন্তত সহায়তা পায়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা সব সময় শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।
জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে শ্রমিকদের ৩৭ জন মেধাবী সন্তান এবং দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ জন শ্রমজীবীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন।
সূত্র: বাসস