অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের দাবি
প্রকাশ : ০৫ মে ২০১৭, ১৪:০০
প্রসবের সময় অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। সেই সঙ্গে এতে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম মুক্তা এই দাবি জানান।
৪ মে (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ৭১ বিধিতে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিশ উত্থাপন করে তিনি এ দাবি জানান।
সংরক্ষিত আসনের এই সাংসদ বলেন, ইদানীং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পরিসংখ্যান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা যাবে তখনই, যখন প্রসবকালীন জটিলতার কারণে শুধু প্রসূতি মায়েদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত ও ধনী মানুষের মধ্যে অস্ত্রেপচারের প্রবণতা বেশি। কিন্তু অস্ত্রোপচার আসলেই প্রয়োজন হলে সেটা ধনী-গরিব শ্রেণি-বিভেদ সৃষ্টি করবেন না, সবার জন্য তা সমান দরকার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ৮০ শতাংশ সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারের মাধ্যমে। বিশেষ করে পরিবারগুলো যত ধনী হচ্ছে তত বাড়ছে সিজারিয়ানের হার। মেডিকেল ইন্ডিকেশন মেনে চললে ধনী-দরিদ্র সবক্ষেত্রে এর হার এক হতো।
নূরজাহার বেগম বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেল্থ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৪ থেকে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে ১০ জন শিশুর মধ্যে ৬ জন শিশুর জন্ম হয় সিজারের মাধ্যমে। বিডিএইচএসের জরিপে আরও জানা যায়, ২০০৭ সালে সিজারের মাধ্যমে ৯ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সিজারে। ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ, ২০১৪ তা বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রচলিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১৫ তে দেখা যায়, দেশের উপজেলাগুলোতে সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্মের সংখ্যা প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। ২০১৩ সালে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে সন্তান প্রসবের জন্য ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন প্রসূতি মা ভর্তি হন। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৮৬৮ জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব করেন, আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩ শিশুর। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ প্রসূতির মধ্যে শতকরা ৮০ জনেরই স্বাভাবিক প্রসব করানো যেত।
তিনি বলেন, মা ও শিশুকে রক্ষা করার জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ করা প্রযোজন। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন, সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলারভিত্তিতে হাসপাতাল-ক্লিনিক ইত্যাদির অনুমতি প্রদান ও নবায়ন করার বিধান চালু করা, প্রসূতিবিদদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষণ, জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা, অত্যাবশ্যকীয় সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা এবং অনাবশ্যক সিজারের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো, মানদণ্ড নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অবসটেট্রিক ও গাইনিকলোজিকেল সোসাইটি অব বাংলাদেশকে (ওজিএসবি) পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।