অন্ন খুঁজছে অন্নদাতা কৃষক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৭, ১৪:৫৩
হাওরের কৃষকের গোলা, গোয়াল শূন্য। ঘরে ভাত নেই। পকেটে টাকা নেই। দলে দলে এলাকা ছেড়ে সপরিবারে অনেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে বাড়ি ছাড়ছে।
গত ১৫ দিন ধরে ফসলহারা কৃষকদের দলে দলে ছুটতে দেখা গেছে। বেঁচে থাকার একমাত্র ফসল হারিয়ে তারা অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়াচ্ছে। অনেক কৃষকের সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে
গেছে।
সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্টেশনস্থ আল শামীম কাউন্টারে কর্মরত পঞ্চাশোর্ধ শ্রমিক মোজাফর আলী বলেন, "কিতা খইতামরে বাবা, আজকু দুই সপ্তা ধরি শ শ মানুষ দেশ ছাইড়া যার। আউরের ধান নষ্ট অউয়ায় খানির অভাবে তারা দ্যাশ ছাড়ের"। (কি বলব বাবা, আজ দু’সপ্তাহ হলো শত শত মানুষ বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। হাওরের ধান নষ্ট হওয়ায় খাবারের অভাবে তারা বাড়ি ছাড়ছে।)
সুনামগঞ্জের পুরাতন বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্বল্পমূল্যের ঢাকাইয়া বাস কাউন্টারগুলোতে নানা বয়সের মানুষের ভিড়। নারীরা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কাউন্টারে বসে আছেন।
পিছনে কলেজ ব্যাগ। পরনে একটি ফুল শার্ট ও জিন্সপ্যান্ট পরা এইচএসসি পড়ুয়া ছাত্র ইমরান আলী। তার বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার নতুনগাঁও। পাশেই তার বড় ভাই জায়েদ আলী ও দুই কিশোরী বোন। দুটি বড় বালতিতে দেখা গেল কয়েকটি হাড়ি পাতিল।
ইমরান বলেন, "বুঝইন্যানি ভাই, কোয়াই যায়রাম, কিতার লায় যাইরাম"। (বুঝেন না ভাই কই যাই, কেন যাই)।
ইমরান জানালো তার প্রান্তিক চাষী পিতা বড় ভাই জায়েদ আলীকে নিয়ে দেখার হাওরে ৩ একর জমিতে বোরো লাগিয়েছিলেন। সুদে ঋণ নিয়েছিলেন বেশ কয়েক হাজার টাকা। সেই টাকার সুদ বাড়ছে। সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সুদের ঋণ পরিশোধ করতে ও পরিবারের খাবারের সংস্থান এবং চার ভাই-বোন ঢাকায় যাওয়ার ভাড়ার জন্য একমাত্র গবাদি পশুটি জলের দামে বিক্রি করে দিয়েছে। গার্মেন্টসে কাজ করতে চার ভাই বোন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।
এভাবেই ফসলহারা কৃষক প্রতিদিন বাড়িঘর ছেড়ে সপরিবারে কাজের সন্ধানে ছুটতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে গত ২৫ এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা খামারাবাড়িস্থ কার্যালয়ের পরিচালককে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুনামগঞ্জের হাওরে ৯০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কারণ হিসেবে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যা ও বাঁধ ভাঙ্গার কথা বলা হয়েছে।