কালবৈশাখী ঝড়ে তলিয়ে গেল ত্রাণের ৩৬০ বস্তা চাল

প্রকাশ : ০২ মে ২০১৭, ২০:০৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

সুনামগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। ত্রাণের ৩৬০ বস্তা সরকারি চালসহ নৌকা সুরমা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ঘটনায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

৩০ এপ্রিল (রবিবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঝড় আঘাত হনে। জেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল হারিয়ে যখন কৃষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা। এমন সময় সোমবার ভোরে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে অসহায় মানুষদের জন্য পাঠানো ত্রাণের ৩৬০ বস্তা সরকারি চালসহ নৌকা সুরমা নদীতে তলিয়ে গেছে। 

ত্রাণবাহী নৌকাটি সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরের খাদ্য গুদামের পাশের নদীতে বাঁধা ছিল। ভোরে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়। এ ত্রাণের চাল সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নে নেয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কালীপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। 

এ গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া জানান, ছয়মাস আগে তিনি টিনের একটি নতুন ঘর করেছিলেন। সেটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুল মোমেন বলেন, তাদের গ্রামের শুধু ঘরবাড়ি নয়, গাছাপালা, বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

একই গ্রামের মাজেদা বেগম (৩৩) বলেন, আমরা যে বাঁচছি এইটাই বড় কথা। ইলা লারা (ঝড়) আমি আমার জীবনে দেখছি না। ঘর ভাঙ্গি গিছে। এখন থাকার জায়গা নাই। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন জানান, তার উপজেলার সব ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তিনি পাননি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, তার উপজেলায় ২০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ৫০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাটে গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ লাইন বিকল হয়ে পড়েছে।

ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, আমার এলাকায় মনে হচ্ছে ক্ষতি বেশি হয়েছে। চারদিক থেকে মানুষ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানাচ্ছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছি। মানুষজন এমনিতেই ফসল হারিয়ে দিশেহারা। এখন আবার ঝড়ে অনেকে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। বুঝতে পারছি না, মানুষ এত বিপদ মোকাবেলা করবে কীভাবে- এ কথা বলেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যনা কামরুজ্জামান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি যে খবর পেয়েছেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা কয়েকশ' হবে বলেও জানান তিনি। 

স্থানীয় লোকজন ও জন প্রতিনিধিদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যমতে, জেলায় প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম জানান, ছাতক-সুনামগঞ্জের ৩৩ কেভি লাইনের একটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতের ছয়টি খুঁটি হেলে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে। শহরের ভিতরের অবস্থা আরও খারাপ। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এঠা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুর রউফ চাল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, নৌকাটি ঘাটেই বেঁধে রাখা হয়েছিল। গত রাতের কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়।

জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক উপজেলা থেকেই ঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতির কথা আমাদের জানানো হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রশাসনের লোকজন কাজ করছেন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

0Shares
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত