ডায়েরির সূত্র
‘আমার মৃত্যুর কারণ এসআই মিজানুল ইসলাম’
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৪৫
ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার নারী কনস্টেবল হালিমা বেগমকে ধর্ষণ করেছে এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম। সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে হালিমার বাবা ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মৃত্যুর আগে মেয়ের লেখা চিরকুট ও ডায়েরির সূত্র ধরে তিনি এ দাবি করেন।
এ সময় হালিমার বাবা হেলাল উদ্দিন আকন্দ ‘হালিমার লেখা চিরকুট (ডায়েরি) ও ওসির কাছে করা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ‘লিখিত অভিযোগ’ গণমাধ্যমের কর্মীদের দেখান।
‘আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করেন। ১৭/০৩/১৭ ইং রাত ২.০০ ঘটিকায়। আমার অভিযোগ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রহণ করেন না।’ ডায়েরি এ রকম কথা লিখে গেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার কনস্টেবল হালিমা বেগম।
গৌরীপুর থানার ব্যারাকে ২ এপ্রিল নিজের কক্ষে শরীরে আগুন দেন হালিমা। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই রাতেই এসআই মিজানুলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ৪ এপ্রিল হালিমার বাবা বাদী হয়ে মিজানুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। মিজানুল বর্তমানে কারাগারে আছেন।
ওসির কাছে ‘লিখিত অভিযোগে’ হালিমা উল্লেখ করেন, মিজানুল তাকে নানা সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় মিজানুল তার ক্ষতি করার হুমকি দেন। ১৭ মার্চ দিবাগত রাত দুইটার দিকে মিজানুল হত্যার হুমকি দিয়ে ব্যারাকে হালিমাকে তার কক্ষে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি একই থানার এসআই রিপন জানতেন। রিপন বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। ওসির কাছে এ ঘটনায় অভিযোগ দিতে হালিমাকে পরামর্শ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হালিমার বাবা হেলাল উদ্দিন আকন্দ বলেন, ‘আমার মেয়ের মৃত্যুর পর ৬ এপ্রিল গৌরীপুর থানার ব্যারাক থেকে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিই। সেখানে তার একটি ডায়েরি পাওয়া যায়। তাতে হালিমা নিজের হাতে ওই সব কথা লিখে গেছে।’
তিনি বলেন, একে তো হালিমা নিজ ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তার ওপর সহকর্মীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছেন—এত অপমান সহ্য করতে পারেননি হালিমা। মেয়ের প্রতি এই অন্যায়ের তিনি দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
ওসি দেলোয়ার আহম্মেদ বলেন, ‘হালিমার সঙ্গে মিজানুলের অনৈতিক সম্পর্কের গুঞ্জন শোনার পর হালিমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম মিজানুল তাকে উত্ত্যক্ত করেন কি না। হালিমা তখন কোনো অভিযোগ করেননি।’
মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমারত হোসেন গাজী বলেন, ওই নারী কনস্টেবলের আত্মহত্যার পেছনে এসআই মিজানুল ইসলামের দায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর সঙ্গে আরো কারো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।