২১১ প্রতিবন্ধী সন্তানকে আগলে রাখেন জেসমিন
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২২:২৪
প্রতিবন্ধীতা অভিশাপ নয়। ইচ্ছে করে কি কেউ প্রতিবন্ধী হয়? তারা কেন অধিকার বঞ্চিত হবে, হবে করুণার পাত্র? আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নানা ধরণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কুসংস্কার আছে। যা সম্পূর্ণ অমানবিকতার পরিচায়ক। কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা মায়ের মমতায় বড় করে তুলছেন। প্রতিবন্ধী বাচ্চারা তাকে দেখলে ছুটে এসে তার কাছে দাঁড়ায়। তাকে একেক জন একেকভাবে জড়িয়ে ধরে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাশীল, ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও স্নেহশীল কি তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ জেসমিন আরা।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদিয়া মুমু বলেন, অনেক সময় বাচ্চাগুলো বিভিন্নভাবে জেসমিন আপাকে বিরক্ত করেন। তখন আপা ওই বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয়। আপা অনেক বাচ্চাসহ এক প্লেটে ভাত খান।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাদের অত্যাচারে আমরা শিক্ষকরা অনেক সময় রাগ হলে আপা আমাদের ধমক দেন। জেসমিন আপা বলেন, ওদের অত্যাচার আমার কাছে ভালোবাসার ডাক মনে হয়।
প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা বলেন, আমি যখন রংপুর লালকুঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম তখন থেকে আমার স্বপ্ন আমি প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু একটা করবো। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৫ সালে আমার স্বামী প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্বাশুড়ির নামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১০১ জন, বাক প্রতিবন্ধী ৪০ জন, শরীরিক প্রতিবন্ধী ৬৫ জন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৫ জন। তাদের অনেকেই লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাবী হলেও নেই তাদের মেধা বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ। শুধু সচেতনতার অভাবেই ওরা অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।