পটুয়াখালী গণহত্যা দিবস আজ
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০১৬, ১১:১৮
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল এই ভয়াল দিনে পটুয়াখালী শহরে প্রথমবারের মতো পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে শত শত নারী পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। সেই দিনের গণহত্যার কথা মনে করে আজও আঁতকে উঠেন অনেকেই। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের এই সব অঞ্চল ভিত্তিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে এখন অনেটাই আজানা। আর তাইতো নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে উদ্যোগ নেবার দাবি স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের।
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা। সবাই যখন ব্যস্ত নিজেদের কাজে। সেই সময়ে শহরের দুই প্রান্তে দু’টি হেলিকপ্টার নেমে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বন্দুক নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন পাক হানাদার বাহিনী। শহরের মাদবর বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেখানেই নিরীহ ১৯ নারী, পুরষ ও শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেন হানাদাররা। এরপরে দুপুর ২টার দিকে শহরের প্রবেশ করে পাকবাহিনী। আর সে সময়ে ডিসির বাংলোর কাছে স্থাপিত বাংকার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলে পাকবাহিনীর গুলিতে বাংকারে থাকা ৬ আনসার সদস্য নিহত হন।
এরপরে ঐ দিন থেকেই শহর জুড়ে পাক বাহিনী চালায় গণহত্যা। তৎকালীন ব্যবসার কেন্দ্র বিন্দু পুরান বাজার এলাকা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ভস্মীভূত হয় শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বর্তমান পুরান বাজারের শত শত বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এই গণহত্যায় সেদিন কতো মানুষ নিহত হয়েছিল তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
পটুয়াখালী শহরের কলাতলা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজাহা আলী জানান, ২৬ এপ্রিল দিনভর পটুয়াখালী শহর জুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় সার্চ করে শত শত নিরীহ নারী-পুরুষদের হত্যা করে। আর সেই দিন থেকেই শুরু হয় পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ। তবে স্বাধীনতার এই ৪৩ বছরেও নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের এসব অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস জানাতে না পারায় আক্ষেপ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
আর স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছরেও শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও গণকবরগুলো সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোন না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্বজনরা। আর নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের এসব অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস জানানোটাও জরুরি বলে মনে করেন তারা।
পটুয়াখালীর মাদবর বাড়ির বাসিন্দা ফোরকান মাদবর আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে ২৬ এপ্রিল আমাদের মাদবর বাড়ির অন্তত ১৯ নারী-পুরুষ শহীদ হন। তবে এই দীর্ঘ ৪৩ বছরেও এ গণকবরটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি। আর এভাবে চলতে থাকলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে মাদবর বাড়ির গণকবরটি।’
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের এসব অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস জানাতে ব্যর্থ হলে বর্তমান সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার যে অপচেষ্টা চলছে আগামী দিনে তা আরো বেগবান হবে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষরা।