'বেশি ধর্ষিত হয় শিশুরা'
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৭, ২১:১৭
প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুরাই বেশি ধর্ষিত হয় বলে ব্র্যাক এর একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ধর্ষণের ঘটনায় প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুর সংখ্যা ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি।
দেশের ৫৫টি জেলার ১২ হাজারের বেশি কমিউনিটিভিত্তিক নারী সংগঠন ‘পল্লী সমাজ’ এবং ব্র্যাকের অন্যান্য কর্মসূচি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি গত বছর একটি ডেটাবেইস বা তথ্যভান্ডার তৈরি করে।
এ তথ্যভান্ডার বলছে, ০ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুরা ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়। এই বয়সীদের বেলায় ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাও বেশি ঘটে। এই বয়সী মেয়েশিশুদের মোট ১২৯টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়, যার মধ্যে ৫৭টি ধর্ষণ, একটি গণধর্ষণ এবং ৩৭টি ধর্ষণ চেষ্টা অর্থাৎ মোট ৯৫টি ঘটনাই ঘটেছে ধর্ষণ সম্পর্কিত। ধর্ষণের ঘটনায় প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুর সংখ্যা ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি ছিল। তথ্যভান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিদিন প্রায় দুজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। নথিভুক্ত ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে ৪৭ শতাংশই ঘটে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে।
গত সপ্তাহে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি আয়োজিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এক বাবা গত বছরের আগস্ট মাসে তার মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, "আমার মেয়ের বয়স ছিল আট মাস। সবার কোলে কোলে থাকার বয়স, কোলেই থাকত। কিন্তু ওই মেয়েকে রেপ করছে। বাবা হয়ে আমি আর কী বলব? আমি কোনো কিছু কইরাই শান্তি পাই না। আমি এর বিচার চাই"।
তিনি জানান, গাজীপুরে আসামি আর তারা পাশাপাশি ঘরে থাকতেন। সকালে মেয়েকে কোলে নিয়ে বেড়াতে যান শিশুটির ফুফু। আসামির স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তিনি মেয়েকে কোলে নেন। শিশুটির ফুফু তাকে আসামির ঘরে রেখে চলে আসেন। আসামির স্ত্রী শিশুটিকে বিছানায় রেখে রান্না ঘরে যান। আসামি তখন ঘরেই ছিলেন। কিছুক্ষণ পর শিশুটির চিৎকারে সবাই দৌড়ে যান। তখন আসামি শিশুটির কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন।
তিনি বলেন, "তখন পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেনি ঘটনা কী ঘটেছে। মেয়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়া রক্ত পড়তে থাকে। গাজীপুরে এক হাসপাতালে নিলে ওই জায়গায় তিনটি সেলাই দিতে হয়। এলাকার লোকজনকে ঘটনার কথা জানানো হইছে"।
নির্যাতিত শিশুটির বাবা জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর জয়দেবপুর থানায় মামলা করেছেন বাবা। মামলা করার পর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। তবে আসামিপক্ষের হুমকি তাঁর পিছু ছাড়েনি।
তিনি বলেন, "ঘটনার পর থেকে আসামি পলাতক। তবে তাঁর লোকজন কেস তুলে নিতে বলে। ৫০ হাজার টাকা দিতে চায়। কিন্তু আমি চাই আসামিরে পুলিশ ধরুক। ঘটনার বিচার চাই"।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ বলেন, গাজীপুরে বেশির ভাগ লোকজন কাজের জন্য আসে। অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে বসবাস করে। বাড়িওয়ালারাও সেভাবে ভাড়াটের তথ্য সংগ্রহ করেন না। একটি ঘটনা ঘটলে তখন আর ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না।