ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামেই হবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৬, ২৩:১২
সারাদেশে চলমান হত্যাকান্ড, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এর বিরুদ্ধে বুধবার বিকেল ৩:৩০ মিনিটে শাহবাগে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-শিক্ষার্থী-পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ এই ব্যানারে এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি অধ্যাপক অজয় রায়। তবে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেশজুড়ে চলমান গুপ্ত হত্যার বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন দেশ বরেণ্য এই অধ্যাপক এবং নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার এই অধ্যাপক বলেন, "অনেক রক্তে এই রাষ্ট্র পেয়েছি, এতো ত্যাগের রাষ্ট্রকে এভাবে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমাদের সবাইকে আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব টার্গেট কিলিং, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে"।
জীবন জয়ন্তের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে এরপর বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ভাস্কর রাসা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফী রতন, সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতম, সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক, প্রকাশক রবিন আহসান প্রমুখ।
সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকেই এই দেশে অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনা মানুষদের হত্যা করা শুরু হয়। নাস্তিক ব্লগার আখ্যা দিয়ে হত্যা করে তেমন সুবিধা করতে না পেরে এখন তারা নিরীহ মানুষ, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট বানিয়েছে।
তিনি বলেন, “একাত্তরের মতোই সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতেই এখন তাদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। যা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো ভাবেই হতে দেয়া যায় না”।
একই দাবিতে শনিবার (১৮ জুন) সারা দেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সমাবেশ করবে বলে জানান তিনি।
ভাস্কর রাসা বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শক্তিরাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একাত্তরে যেভাবে আমরা একত্রিত হয়েছি সেভাবেই আবার একত্রিত হতে হবে। তাহলে এ ধরনের হত্যা বন্ধ করা যাবে”।
লেখক ও সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দেশে একই পদ্ধতিতে অনেকগুলো খুন হয়েছে। কিন্তু একটিরও বিচার হওয়া তো দূরে থাক, জড়িতদের গ্রেফতারও করা হয়নি। যদি একটি খুনেরও বিচার হতো তাহলে এতগুলো খুন হতো না”।
সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক বলেন, “প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। দেশে এখন নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। কোন ঘটনার বিচার হচ্ছে না। উল্টো যারা দেশে জঙ্গির অস্তিত্বের কথা বলেছেন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উন্নয়ন বিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আজ যখন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হয়েছেন তখন আবার সরকারই জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে”।
সংহতি সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, “ব্লগার কিংবা লেখক হত্যাকাণ্ডের পর আমরা দেখেছি হত্যাকারীদের না খুঁজে উল্টো হত্যার শিকারদের লেখা তদন্ত করে দেখার মতো হাস্যকর বিষয় নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে কথা বলা হয়েছে। এভাবেই এসব খুনকে জায়েজ করা হয়েছে। এই অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান নেয়া পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। খুনিদের গ্রেফতারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে সরকার এখনো কেবল জঙ্গিবাদ বিরোধী কথাই শুনিয়ে যাচ্ছে। আবার খুনের দায়ে যাদের ধরা হচ্ছে তাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে। ফলে খুনের পেছনে মূল হোতা কারা সেটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে”।
সাবেক যুব ইউনিয়ন নেতা কাফি রতন বলেন, “ভোটের লোভে এই সরকার জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই ভোটের রাজনীতির জন্য প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সাথে হাত মেলায়। তাদের এই রাজনীতির বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই বাংলাদেশ গড়তে এখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে”।
সমাপনী বক্তব্যে উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতিই আজ বাংলাদেশে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দেরীতে হলেও সরকার এখন জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। সেই অভিযান যদি প্রকৃতই জঙ্গিদের ধরার জন্য হয় আমরা একে সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু যদি ‘আই ওয়াশ’ এর জন্য এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানির জন্য এই অভিযান হয় তাহলে এই মঞ্চ থেকেই আমরা এর বিরোধিতা করবো। আমরা আশা করবো পুলিশ বাহিনী সহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা আছেন তারা কোন ধরণের প্রভাবমুক্ত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করবেন”।
একই ইস্যুতে আগামী শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেল ৩টায় শাহবাগে দেশের সকল প্রগতিশীল গণসংগঠনের সমন্বয়ে গণআন্দোলন মঞ্চ তৈরি করার ঘোষণা দেয়া হয় সমাবেশ থেকে।