বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১৯:২৮
বাংলাদেশে শিশুর অধিকার রক্ষায় ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭’ আইনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু একই সঙ্গে এই আইনে উল্লেখিত বিশেষ বিধানটি শিশু অধিকার রক্ষায় একটি বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই এ বিশেষ বিধান রাখা যাবে না।
১৮ মার্চ (শনিবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের হলরুমে ইয়াং চেঞ্জ মেকারস কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চাইল্ড পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর ডেপুটি স্পিকার জান্নাতুল ফেরদৌস মমি।
মমি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭’ আইনটি জাতীয় সংসদে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাশ হয় এবং ১১ মার্চ আইনটিতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন। নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় কর্মরত শিশু-কিশোর ও সুশীল সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ এর সংশোধনীর মাধ্যমে এ আইন পাশ হয়েছে। যা শিশু অধিকার রক্ষায় গুরুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে, পিতা-মাতা ও অভিভাবক এবং আদালতের অনুমোদনক্রমে বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে, তাহলে তা অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না কিংবা অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হবে না এ বিশেষ বিধানটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। কেননা, শিশু অধিকার সনদ এবং শিশু নীতি ২০১১ ও শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল মানব সন্তান শিশু হিসেবে গণ্য। যা এই বিশেষ বিধানটির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। শুধু তাই নয় এই বিশেষ বিধান একই সঙ্গে নাগরিকের অধিকার রক্ষাসহ অন্যান্য অধিকারের সাথেও সাংঘর্ষিক। এমনকি ১৮ বছরের নিচে সকল শিশুকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে বলা হয়েছে। অথচ এখানে নির্ধারিত কোন বয়সের নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে আইনে ‘শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ‘ উল্লেখ করা হলেও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
শিশু ও কিশোরদের মতামত সরকারের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতেও ১৮ বছর বয়সের আগে কোন বিয়েই বৈধ হবে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ থাকতে হবে। শিশুর বিয়ে সমাধান হিসেবে নিলে সেটি শিশুর জন্য অকল্যাণকর এবং শিশু অধিকারের পরিপস্থি হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনের এ সংগঠনটির পক্ষে ইয়াং চেঞ্জ মেকারস কোয়ালিশনের পক্ষে বিশেষ বিধানটির অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহাররোধে এবং আইনটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কয়েকটি সুপারিশমালাও লিপিবদ্ধ করেন। তাহলো- বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭ এর বিশেষ বিধানের অপব্যবহার রোধ করার লক্ষ্যে অভিভাবক এবং শিশুদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাসহ বিধিপ্রণয়ন করা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কমিটিসমূহের সঙ্গে শিশুকল্যাণ বোর্ডের সমন্বয় করা, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থটি কি প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিমুর মতামতকে বাধ্যতামূলক করা, মনিটরিং সেল গঠন করা, বাল্যবিয়ের শাস্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করা, আইন অনুযায়ী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা করা এবং স্থানীয় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- ইয়ুথ ফর চেইঞ্জ এর অ্যাডভাইজার আয়েশা আক্তার কেয়া, প্যানেল মেম্বার এস এম শাহরিয়ার সিফাত, ইয়ুথ অ্যাডভাইজারী প্যানেলের কান্ট্রি মেম্বার ফায়েজ বেলা ও আবদুল্লাহ জুবায়ের।