আদালতে খাদিজার সাক্ষ্যগ্রহণ, ১ মার্চ যুক্তিতর্ক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩৮
সিলেটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা খাদিজা বেগম নার্গিস আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রবিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে খাদিজা আদালতে আসেন। এসময় বদরুলকেও হাজির করা হয় আদালতে। বদরুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজা।
সাক্ষ্য দেয়ার সময় খাদিজা বলেন, ৫-৬ বছর আগে খাদিজাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতেন বদরুল। সে সময় থেকেই বদরুল তাকে উত্যক্ত করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, “গত বছরের ৩ অক্টোবর পরীক্ষা থেকে বের হয়ে বান্ধবীকে সাথে নিয়ে যাবার পথে এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে বদরুল আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। বদরুলের নৃশংস হামলায় আমি সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।”
পরে বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী জেরা করেন খাদিজাকে।
ওই সময় এ আইনজীবী একটি ছবি উপস্থাপন করে খাদিজার কাছে জানতে চান ছবিটি তার কিনা। খাদিজা তা অস্বীকার করেন। এছাড়া বদরুলের সঙ্গে খাদিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি-না জানতে চাইলেও খাদিজা ‘না’ উত্তর দেন।
এরপর আদালত বদরুলের কাছে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি দেবেন না বলে জানান।
গত ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ পরান থানার এসআই হারুনুর রশিদআদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়।
গত ২৯ নভেম্বর আদালতে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। খাদিজার সাক্ষ্য ও জেরার মাধ্যমে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হল।
এ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান জানান, "এ মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে খাদিজাসহ ৩৪ জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হলো। এর আগে ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আগামী ১ মার্চ যুক্তিতর্কের জন্য দিন রাখা হয়েছে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করা হবে"।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের হামলার শিকার হন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়।
হামলার পর ঢাকায় এনে স্কয়ার হাসপাতালে ৪ অক্টোবর বিকালে খাদিজার অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়ায় তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে।
সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে শুক্রবার বাড়ি ফেরেন কলেজপড়ুয়া এই তরুণী।
খাদিজার ওপর হামলাকারী বদরুলকে ঘটনাস্থল থেকে ধরে তখনই পুলিশে দেয় জনতা। ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। বদরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।