মুক্তিযুদ্ধে স্বামীহারা লতিফার কান্না থামেনি আজও
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০৭
“বাবারে কাঁদতে কাঁদতে এখন অন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। বঙ্গবন্ধুকে বড় বেশি ভালবাসতেন আমার স্বামী সোলায়মান। ৭ মার্চ ভাষণের পর বাড়ি থেকে বের হলো আর ফিরে আসেনি। বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন তার কোন সঠিক খবর এতদিনেও পাইনি। যুদ্ধের পর কত জায়গা গেছি অবুঝ তিন সন্তান নিয়ে। স্বামীর খোঁজ পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউই কোন খবর দিতে পারেনি। যুদ্ধে যাওয়ার আগে কত হাতে পায়ে ধরেছি, কান্নাকাটি করেছি কিন্তু তিনি কারো কথা শোনেনি। যুদ্ধে যাবেই।”
কথাগুলো বলতে বলতে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে না আসা মো. সোলায়মানের স্ত্রী লতিফা বেগম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সাউধেরখীল নাইত বাড়ির (বর্তমান মোল্লা বাড়ি) আবদুল মালেকের ছেলে মোঃ সোলায়মান তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রোড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি (ই.পি.আর.টি.সি) যা বর্তমানে বি.আর.টি.সির অধীনে ঢাকার কল্যাণপুরে গাড়ির কন্ট্রাকটর হিসাবে কমর্রত থাকাকালীন দেশে যুদ্ধের ডামাঢোল বেজে উঠে।
এসময় মো. সোলায়মান স্ত্রী লতিফা বেগম ও তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার কয়েকদিন পরেই ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে ভেসে আসে “এবারের সংগ্রাম-আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”, যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ো।
৩৫ বছরের তরুণ মো. সোলায়মানের রক্তে আগুন ধরে যায়। তিনিও যুদ্ধে যাওয়ার পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কয়েকদিন পরেই এপ্রিলের ২য় সপ্তাহের কোন এক বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার মো. সোলায়মান বাবা আবদুল মালেকের কাছে জানান, তিনি যুদ্ধে যাবেন। বাড়িতে ওঠে কান্নার রোল। ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে বাবা পাগলপ্রায়, স্বামীর জন্য অজানা আশঙ্কায় স্ত্রী লতিফা বেগম ও বড় মেয়ে সাজেদা বেগম পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। কিন্তু কোন কিছুই দমাতে পারেনি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া মো. সোলায়মানকে।
যুদ্ধ শেষ, এলো বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু স্বামী সোলায়মানের কোন খোঁজ নেই।
রামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু জানান, আমরাও জানি তিনি যুদ্ধে গেছেন, তবে কোন ইউনিটের সাথে যুদ্ধে করেছেন তা আমরা জানি না। আমরা জানি তিনি ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তার পরিবার তার সন্ধানে কত জায়গায় খুঁজেছেন। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি তার কোন সন্ধান পাইনি।