ফেসবুক ও মোবাইলে হুমকি দিলে প্রতিকারের উপায়
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৫৬
বর্তমান যুগটা তথ্য প্রযুক্তির। প্রযুক্তির নিত্য নতুন উদ্ভাবন প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে মানুষের জীবন ধারা। এই জীবন ধারায় একদিকে যেমন আসছে গতি অপর দিকে এই গতিকে কোন কোন সময় থামিয়ে দিচ্ছে প্রযুক্তির অপব্যবহার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথাই ধরা যাক। ফেসবুক, টুইটার, হেয়াট্স অ্যাপ, ই-মেইল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কত সহজ করেছে। ভাবা যায় একবার!
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। আর এই ফেসবুক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নোংড়ামী ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আমাদের তরুণ সমাজ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ই-মেইল বা ব্লগে কাউকে হয়রানি করা কিংবা প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা এর শিকার হলেও পুরুষরাও যে হয়রানীর শিকার হচ্ছে না একথা বলার জো নেই। ফেসবুক, মোবাইল বা ই-মেইলে হুমকী দিলে এর প্রতিকার ও নানা কথা নিয়ে লিখেছেন হাফিজুর রহমান রিয়েল।
দৃশ্যপট ১
তামান্না মৌ। কাজ করেন একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানীতে। যেখানে পরিচয় হয় সহকর্মী রিদমের সাথে। এক পর্যায়ে রিদম প্রেমের প্রস্তাব দেয় মৌ কে । মৌ তাতে সাড়া দেয়নি। ঝামেলা হতে পারে ভেবে মৌ ঐ চাকরি ছেড়ে দেয়। কিন্তু থেমে থাকেনি রিদম। নিয়মিত মোবাইলে বিরক্তি এমনকি হুমকিও দিতো মৌ কে। এক সময় দেখা গেল আরেক ভয়াবহ ঘটনা। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ল মৌ এর বিভিন্ন রকম ছবি। যেগুলো গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তৈরি করা। বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়লো মৌ ও তার পরিবার।
দৃশ্যপট ২
পেনশনের টাকাটা ক’দিন হলো পেয়েছেন বদরুল সাহেব। খুশীতে বুকটা ভরে ওঠে তার। এই টাকা দিয়েই বাড়ির বাকী কাজটা শেষ করবেন বলে ঠিক করেছেন। এ দিকে এই টাকার দিকে চোখ বসিয়েছে একই মহল্লার পিন্টু মিয়া। তার দাবি দুই লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে বাড়ির কোন কাজ করতে দেওয়া হবেনা। মোবাইলে এমন হুমকী পেয়ে বেশ ভড়কে গিয়েছেন বদরুল সাহেব। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বদরুল।
এ দু’টি ঘটনার জন্য আছে আলাদা-আলাদা প্রতিকার ও আইন। প্রথমেই প্রথম দৃশ্যপট দিয়ে কথা বলা যাক- এ ব্যাপারে তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে কি আছে দেখা যাক-
২০০৬ সালের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে বচলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে-
১. যা মিথ্যা ও অশ্লীল ২. কেউ তা পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে পারে ৩. যার দ্বারা মানহানি ঘটে ৪. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে ৫. রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় ও ৬. কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এমন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং কমপক্ষে ০৭ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে (ধারা ৫৭-এর উপধারা-১)
আবার এদিকে ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড এবং দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে হয়রানির প্রতিকার
ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে বিব্রত করা খারাপ মন্তব্য করা কিংবা সম্মানহানিকর কিছু পোস্ট করা অহরহ ঘটছে। পুলিশ ও এরকম অনেক কেস হ্যান্ডেল করছে এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে বর্তমানে এ প্রবণতা বেশ কমেছে। এভাবে যদি কোন ব্যক্তি ফেসবুকের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে বিব্রত বা হয়রানি করে এবং এর ফলে যদি ঐ ব্যক্তি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে থানায় গিয়ে জিডি করুন। সমস্যাটি গুরুত্বর হলে প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কিংবা পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করতে পারেন। প্রমাণস্বরূপ স্ক্রিন শর্ট নিন ও সংশ্লিষ্ট পেইজটি সেভ করে রাখুন যাতে পরবর্তীতে আপনার অভিযোগের ভিতটা অনেক শক্ত হয়।
দ্বিতীয় দৃশ্যপটের মোবাইলে হুমকি পাওয়া বদরুল সাহেব যেভাবে প্রতিকার পেতে পারেন।
মোবাইলে হুমকির প্রতিকার
কেউ মোবাইলে হুমকী, ভয়ভীতি প্রভৃতি দেখালে বা কোন ব্যক্তির কারণে পরিবারিক বা সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে বা মারামারি কলহ বিবাদ তৈরীর আশংকা থাকলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারার আশ্রয় নিতে পারেন। ১০৭ ধারায় এ ধরণের মামলা করলে সেটিকে শান্তি রক্ষার মুচলেকার মামলা বলে। এ ধারায় মামলা হলে যে আপনাকে হয়রানী করছে বা হুমকি দিচ্ছে তাকে এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বন্ড বা মুচলেকা নেওয়া হয়। এ ধরনের মামলা সাধারনত করা হয় নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে। মামলার আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানাসহ, কেন এবং কী কারণে আপনাকে হুমকি দিচ্ছে বা শান্তি বিনষ্ট করছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ১০৭ ধারা একটি জামিনযোগ্য ধারা। এ ধারা মামলা করা হয় মূলত দায়ী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুচলেকা সম্পাদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা।