যৌতুক না পেয়ে বিয়েকেই অস্বীকার!
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:৪৩
যৌতুক না পেয়ে গোপন বিয়ে অস্বীকার করেছেন নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ কুমার সরকার। এনিয়ে প্রদীপ সরকারসহ তার পরিবারের চারসদস্যের নামে রাজশাহীর বাঘা থানায় মামলা হয়েছে।
যৌতুকের জন্য মারধর ও এতে সহায়তার অভিযোগে ভুক্তভোগী সুস্মিতা সরকারের বাবা স্বপন সরকার ওই মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ২১ জানুয়ারি এ মামলা হয়েছে। স্বপন সরকার বাঘার পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। তার মেয়ে সুস্মিতা সরকার রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার সরকার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুরের মনিন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল প্লাস্টিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকার সাভারে কর্মরত। পরিবারের সম্মতিতে আগামি রবিবার আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন প্রদীপ। এ বিয়ে বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সুস্মিতা ও তার পরিবার।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপ কুমারের সঙ্গে গোপনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন কলেজ ছাত্রী সুস্মিতা। এনিয়ে নোটারী পাবলিকে হলফ নামাও করেন তারা। বিষয়টি প্রথম দিকেই জেনে যায় সুস্মিতার পরিবার। এক পর্যায়ে জেনে যায় প্রদীপের পরিবারও।
সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি সুস্মিতার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক দাবি করে প্রদীপের পরিবার। তা না হলে সুস্মিতাকে পুত্রবধূ হিসেবে তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যৌতুক দিতে রাজি না হওয়ায় ২০ জানুয়ারি বাবার বাড়িতে স্বামী ও তার ভাইদের নির্যাতনের শিকার হন সুস্মিতা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন তিনি।
সুস্মিতার বাবা স্বপন সরকার জানান, প্রদীপের বাবা মনিন্দ্রিনাথ সরকার, ভাই বিশ্বনাথ সরকার, প্রকাশ সরকার, বিকাশ সরকার তার বাড়িতে এসে যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু তারা তাতে রাজি হননি। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সম্মত হয়নি প্রদীপের পরিবার। উল্টো তার বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার মেয়ে। এনিয়ে তিনি নিজেই বাদি হয়ে বাঘা থানায় ওই মামলা দায়ের করেন।
স্বপন সরকার অভিযোগ করেন, মামলা দায়েরের চার দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা। উল্টো মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
ভুক্তভোগী সুস্মিতা সরকার বলেন, দীর্ঘ চার বছর প্রেমের পর গোপনে বিয়ে করেন তারা। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও প্রদীপের চাপের কারণে বাধ্য হন। এখন তিনি যৌতুক না পেয়ে বিয়ে অস্বীকার করছেন। আগামী রবিবার পরিবারের সম্মতিতে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন প্রদীপ। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে আসামিদের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলায় হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
তিনি বলেন, মামলার নথি বড়াইগ্রাম থানায় পাঠানো হয়েছে। তারাই এনিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেবেন। বাঘা থানা পুলিশও আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি। তারাও এনিয়ে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি প্রদীপ সরকারকে। তবে তার ভাই বিকাশ সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়ে পক্ষই বিয়ে মেনে নেয়নি। যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগও ভিত্তিহীন।