চাকরি পেয়ে বিয়ে অস্বীকার, স্ত্রীর মামলা
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৩৪
![](https://bangla.jagoroniya.com/templates/jagoroniya-v1/images/jagoronia.png)
![](/assets/news_photos/2016/12/20/image-4989.jpg)
চাকরি পাওয়ার পর পুলিশের এক সদস্য তার বিয়েটাই অস্বীকার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহসান হাবিব (২৩) নামে ওই পুলিশ সদস্য (কন্সটেবল নং-১৯৩) বর্তমানে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) কর্মরত আছেন।
তার বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামে। বাবার নাম আশরাফুল ইসলাম। পুলিশে চাকরি পাওয়ার আগে আহসান হাবিব জেলার মোহনপুর উপজেলার কালিগ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে রাজিফা খাতুন ওরফে মনিকে (১৯) বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আহসান হাবিব বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
এ নিয়ে রাজিফা খাতুন মনি থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেছেন। লিখিত অভিযোগ করেছেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কাছেও। মনির দায়ের করা মামলায় স্বামী আহসান হাবিবসহ বিয়ের কাজী দুরুল হুদা (৫০), সহকারী কাজী মো. দবির (৪২), শ্বশুর আশরাফুল ইসলাম (৫০) ও মামা শ্বশুর মো. মঞ্জুর (৩৫) এবং মো. রাসেলকে (৩৩) আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মনির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আহসান হাবিবের। গত বছরের ৭ জুন মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের রুপালী বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে মনিকে বিয়ে করেন আহসান হাবিব। স্থানীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার দুরুল হুদা তিন লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে পড়ান। বিয়ের পর আহসানের পরিবার তা মেনে না নেয়ায় মনি তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন। আহসান হাবিব মাঝে মাঝে তার শ্বশুর বাড়িতেও থাকতেন। কিন্তু তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে যেতেন না।
এরই মধ্যে বিয়ের বিষয়টি গোপন করে তিনি পুলিশে যোগ দেন। তখন মনি তাকে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আহসান তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর তিনি প্রশিক্ষণে চলে যান। হঠাৎ তিনি মনির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মনি তখন আরআরএফ’এ যোগাযোগ করে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। আহসান এ সময় দাবি করেন, তিনি মনিকে বিয়ে করেননি। এমনকি তিনি তাকে চেনেনও না।
মনি জানান, এ ঘটনার পর তিনি আহসান হাবিবের বাবা-মা ও মামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ছেলের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারাও বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। বাধ্য হয়ে তিনি নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে বিয়ের কাবিননামার কপি তুলতে চান। কিন্তু নিকাহ রেজিস্ট্রার দুরুল হুদা তা দিতে রাজি হননি।
এরপর তিনি তাদের নামে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল ও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর তিনি আদালতে একটি মামলা করেন। গত ২৯ নভেম্বর রাজশাহীর আমলী আদালত-১ এর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সালাম মামলাটি আমলে নিয়ে আগামি ১২ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
মনি বলেন, নিকাহ রেজিস্ট্রারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পুলিশ সদস্য আহসান হাবিব তার বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। এ জন্য নিকাহ রেজিস্ট্রার তাকে তার কাবিননামার কপি দেননি। এদিকে বিয়ের কথা গ্রামের সবাই জানলেও আহসান হাবিব এখন তা অস্বীকার করায় তিনি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য আহসান হাবিব বলেন, "বিয়ের বিষয়টি সঠিক না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মনি নামের কোন মেয়েকে আমি চিনি না"।
এদিকে মোহনপুর থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, "বিয়ের কাজী দুরুল হুদার নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ছিল। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি জামিন পেয়েছেন কী না তা জানি না"।
ওসি বলেন, "আহসান হাবিব পুলিশ সদস্য হলেও তার নামে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তও হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে"।
আর আদালতের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া বলেন, "এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে"।