মিতু হত্যাকাণ্ডে সাবেক শিবিরকর্মী আটক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০১৬, ১৪:৪৫
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মো. আবু নসুর গুন্নু নামে এক সাবেক শিবির ক্যাডারকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (০৮ জুন) সকালে চট্টগ্রামে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ থেকে আবু নসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মফজল আহমদ এর ছেলে নসুরের বাড়ি হাটহাজারি উপজেলার পশ্চিম ফতেয়াবাদ গ্রামে।
“আবু নসুর গুন্নু ১৯৯৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শিবিরের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করত। এরপর একটা সময় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গিয়ে কাটায় বেশ অনেকটা সময়। বছর দু’য়েক আগে দেশে ফিরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে এবং ফতেয়াবাদের একটি মাজারে খাদেমগিরি শুরু করে সে। সীতাকুণ্ড থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার দু’টি মামলায় রয়েছে।”
সিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, মিতু হত্যায় শুধু ৩ জন নয়, আরো অনেকেই অংশ নিয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের পেছনে আরেকটি কালো রঙের মাইক্রোবাস আছে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা যখন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছিল, তখন জিইসি মোড়ের দিকে কিছুটা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি কালো মাইক্রোবাস। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে মাইক্রোবাসটি। পাঁচ সেকেন্ডের মতো ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি।
পরে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায় ওই মাইক্রোবাস। কালো কাচের এ মাইক্রোর চালকের আসনের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। অন্যসব জানালা বন্ধ ছিল। এ কারণেই গোয়েন্দারা মাইক্রোবাসের যাত্রীর সঙ্গে এ খুনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
দেবদাস ভট্টাচার্য আরোও জানান, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার পরেই মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৪জনকে সোমবার (০৬ জুন) রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। মোটরসাইকেলের মালিক, এক ক্রেতা ও এক দালাল নগর গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে থাকলেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলের মালিক দেলোয়ার হোসেন ২০১১ সালে বোয়ালখালীর গোমদণ্ডি এলাকার বাবুর্চি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করেন। চলতি বছরের ৯ মে মোটরসাইকেলটি ওই বাবুর্চির বাড়ি থেকে চুরি হয়। এ ঘটনায় বোয়ালখালী থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে।
এদিকে জানা যায়, আটক হওয়া আবু নসুর বিগত ইউপি নির্বাচনে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের কোরআনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে তাঁর কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত চলছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস।
পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে শিবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে বলে চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি যে এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেটি শিবির অধ্যুষিত।
নসুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে তার রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান দেবদাস ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, রবিবার (৫ জুন) সকাল ৭টা নাগাদ চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি এলাকায় (ওআর নিজাম রোডে) প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে জিইসি’র মোড়ে যাওয়ার পথে বাসা থেকে দুইশ’ গজের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলের সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, ৩জন এসে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মধ্যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পুলিশ সুপারের স্ত্রী খুন হওয়ার ঘটনায় সারা দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।