গ্রন্থাগারিকের হাতে ধর্ষণ, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৫১
স্কুলের গ্রন্থাগারিকের হাতে ধর্ষণের শিকার গোদাগাড়ীর দিগরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী খালেদা খাতুন (১৪) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার দুপুরে কীটনাশক পান করলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর রাতে সে মারা যায়। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, নিহত স্কুলছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহত খালেদা খাতুনের বাড়ি উপজেলার জৈটাবটতলা গ্রামে। তার বাবার নাম আলম হোসেন। দিগরাম স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো সে।
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর রাতে খালেদা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তার স্কুলের গ্রন্থাগারিক শহিদুল ইসলাম (৩৮)। পরে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপর তাকে গণধোলাই দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পরে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ অভিযুক্ত শহিদুলকে কারাগারে পাঠায়। শহিদুল উপজেলার জাহানাবাদ গ্রামে দাউদ আলীর ছেলে। তিনি এখনও কারাবন্দী আছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল লতিফ জানান, ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন সম্প্রতি পাওয়া গেছে। তাতে বলা হয়েছে, সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তবে তা জোরপূর্বক নয়।
নিহত ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, এই প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে পারার পর থেকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল খালেদা। ঘটনার পর থেকে সে স্কুলেও যেত না। এলাকার লোকজন নানা কথাবার্তা বলার কারণে লোকলজ্জায় সে গ্রামেও থাকতো না। উপজেলার বালিগ্রামে সে তার নানার বাড়িতে থাকতো। শুক্রবার সেখানেই সে কীটনাশক পান করে।
গোদাগাড়ী থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, ‘কী কারণে খালেদা আত্মহত্যা করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আত্মহত্যার জন্য কেউ প্ররোচনা দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালেদা খাতুন নিজ স্কুলের গ্রন্থাগারিকের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় ওই সময় তার সহপাঠীরা স্কুলে বিক্ষোভ করেছিল। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এর কয়েকদিন পর স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়, স্কুলের আরও কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রীদের অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। তবে এখনও পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।