১৬ বছর ধরে শিকলে বন্দী রেহানা
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৪৮
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রেহেনা বেগমকে আয়ত্বে রাখতে না পেরে শেকলে বেঁধে রেখেছেন বাবা। তাও দেখতে দেখতে হয়ে গেলো ১৬ বছর।
রেহেনা বেগম মানসিক রোগে ভুগছেন। বৃদ্ধ পিতা আলা বক্সের অভাবের সংসার। তিন বেলা খাওয়া জোগাড় করাই কঠিন। এই অবস্থায় মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে যে পরিমাণ টাকা লাগে, তা জোগাড় করা এক সুদূর পরাহত চিন্তা। তারপরও কিছুদিন আগে একবার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ করা যায়নি।
স্বজনরা জানান, পাবর্তীপুর উপজেলার দাগলাগঞ্জ দোলা পাড়ায় জমির উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রেহানার। দুই ছেলে সন্তানের জন্মের কিছুদিন পর মারা যান স্বামী। স্বামীর শোক, অভাবের সংসারে দুচিন্তায় তালগোল পাকিয়ে ফেলেন রেহানা।
এর মধ্যে ছেলেরা বড় হয়। স্বামী কিছু আবদি সম্পত্তির রেখে গেলেও তা বিক্রি করে দেয় তারা। এরপর গরিব রেহানা হয়ে পড়ে আরও গরিব। এক পর্যায়ে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। মানসিকভাবে পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর মাকে পরিত্যাগ করে তার নিজের দুই সন্তান। উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নে এক নং ওয়ার্ডের হরিরামপুর ভাটিপাড়া গ্রামে তার পিতার বাড়িতে এখন তার বসবাস।
রেহানার বাবা আলা বক্স জানান, অসুস্থ হয়ে গেলে তার দুই সন্তান আর মাকে দেখা শোনা করেন না। সন্তানেরা ফেলে দিলেও তো আমি বাবা হয়ে তাকে তো ফেলে দিতে পারি না। বিগত পাঁচ বছর ধরে সে আমার কাছে আছে। যদি বেঁধে না রাখায় হয় তাহলে সে নিজ সেখানে খুশি সেখানেই চলে যায়, এর আগে অনেক বারই সে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ১০/১৫ দিন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক কষ্ঠে খুঁজে পেলে তার পর থেকে তাকে বেঁধে রাখা হয়।
রেহানার দুর্দশা দেখে কোনো স্বচ্ছল মানুষ হাত বাড়িয়ে দেবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে - এমন আশা এখনও ছাড়েননি তার বাবা আলা বক্স। অনুরোধ করেন, তার দুর্দশার কথাটা একটু প্রচারের ব্যবস্থা করতে।