ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশেই সাঁওতালদের উপর গুলি
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:৩৬
কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশেই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের উপর গুলি করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে।
গুলিবর্ষণের কারণ জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত বলেন, “ঘটনার দিন সেখানে পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। তাদের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করা হয়।”
এই পাঁচজন হলেন- গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ আলী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউল ইসলাম ও মেজবাহ উদ্দিন।
সেদিন উপস্থিত পাঁচ ম্যাজিস্ট্রেটের একজন গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও আব্দুল হান্নান বলেন, “ঘটনার দিকে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে একটি আবেদন করা হয় পুলিশ সুপারের বিষয় শাখা থেকে। তখন আমরা দায়িত্ব পালন করি। পুরো এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই দিন বিভিন্ন সময় গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়।”
উল্লেখ্য, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। তাদের একচালা ঘরগুলোতে অগ্নিসংযোগ করা হয় যা পুড়ে যাওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের উপর হামলার জন্য গ্রামবাসীকে দায়ী করছে। অন্যদিকে ওসি ও ইউএনও আগে বলেছিলেন, সেদিন সাঁওতালদের উচ্ছেদ করতে কোনো অভিযান তারা চালাননি।
বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, "ওই অধিগ্রহণ চুক্তির ৫ নম্বর শর্তে উল্লেখ আছে, যে কারণে ওইসব জমি অধিগ্রহণ করা হলেও কখনও যদি ওই কাজে জমি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে অধিগ্রহণকৃত জমি সরকারের কাছে ফেরত যাবে। পরবর্তীতে সরকার এসব জমি আগের মালিকের কাছে ফেরত দেবে। আমরা এর আগে এসে দেখে গেছি, এসব জমিতে মিলের জন্য ইক্ষু চাষ না করে ধান ও তামাক চাষ চলছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকও এ ধরনের একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে। মিল তার চুক্তি ভঙ্গ করেছে"।