'উত্ত্যক্তকারীর'ও গলায় ফাঁস
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:৩৮
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক স্কুলছাত্রীর গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধারের পর এর পেছনে প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল যে 'উত্ত্যক্তকারী'র বিরুদ্ধে সে নিজেও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালে তারা ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন।
স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, গত সোমবার রাতে মেয়েটিকে বাসায় রেখে পাশের এক বাড়ির অনুষ্ঠানে পরিবারের লোকজন যায়। মঙ্গলবার ভোরে আরাফাতকে বাড়ির কাছে দেখতে পান মেয়েটির মা রিমা বেগম। এত সকালে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই আরাফাত দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে মেয়ের ঘরে গিয়ে বিছানার ওপর গলায় ওড়না দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।
এলাকাবাসী ও মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আরাফাত প্রায় ১ বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময় মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে রাজি না হওয়ায় কিছু দিন ধরে রাস্তায় তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। মেয়েটি বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। পরে তার মা-বাবা আরাফাতের পরিবারকে এ ব্যাপারে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তারা বরং আরাফাত উল্টো তাদের হুমকি দেয়।
পরিবারের সদস্যরা ধারণা করেন মেয়েটি একা বাসায় থাকায় আরাফাত পূর্বপরিকল্পিতভাবে মুন্নির ঘরে ঢুকে। ওই ছেলে ‘নিয়মিত উত্ত্যক্ত করে আসায়’ সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
মেয়েটির বাবা মঙ্গলবার রাতেই কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতার নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলের বিরুদ্ধে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনার’ অভিযোগ আনা হয়।
কিন্তু এই ঘটনার পর তার পরিবার যে কিশোরের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মামলা করেছিল, সেই স্কুলছাত্রও গলায় ফাঁস নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, মেয়েটির আত্মহত্যার পর ছেলেটি নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশের আরেক গ্রামে তার ফুপুর বাড়িতে চলে যায়। সেখানেই রাতের কোনো এক সময় গলায় ফাঁস নিয়ে সে আত্মহত্যা করে। স্বজনরা বুধবার সকালে ছেলেটির লাশ ফুপুর বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে সুরতহাল করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পরিদর্শক রফিকুল বলেন, "কালিয়াকৈরের একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের সঙ্গে সেই মেয়েটির ‘প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল’ বলে দাবি করেছেন ছেলেটির মা। ছেলেটির মা বলছেন, এই সম্পর্ক নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তি ছিল। মঙ্গলবার রাতে তার ছেলে গোপনে ওই মেয়ের বাড়িতে যায়। তাদের এক ঘরে পেয়ে মেয়েটির পরিবার মারধর করে ছেলেটিকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর মেয়েটির আত্মহত্যার খবর শুনে ছেলেটি ফুপুর বাড়িতে গিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করে”।
রফিকুল জানান, দুজনের তোলা একটি ছবিও তারা ছেলেটির বাসায় পেয়েছেন। দুই পরিবারের বক্তব্যও তারা খতিয়ে দেখছেন।