টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:১৩
গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস নামে একটি প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ১৫ জনের লাশ টঙ্গী হাসপাতালে রয়েছে। চারজনের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দুজনের লাশ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।
টঙ্গী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ মিয়া জানান, হাসপাতালে নারী ও শিশুসহ ১৫ জনের লাশ রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে টঙ্গীতে থাকা কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- জয়নাল আবেদিন (অপারেটর), আনোয়ার হোসেন (অপারেটর), শংকর (ক্লিনার), রেদোয়ান (দারোয়ান), জাহাঙ্গীর (নিরাপত্তাকর্মী), হান্নান মিয়া (নিরাপত্তাকর্মী), রফিকুল ইসলাম (শ্রমিক), ইদ্রিস, আল মামুন, নয়ন, সুভাষ, জাহিদুল, রাশেদ (রিকশাচালক)।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সাব্বির আহমেদ জানান, সেখানে নেওয়া দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, এই হাসপাতালে এক নারীসহ চারজনের লাশ রয়েছে। তাছাড়া ভর্তি রয়েছেন আরও ১৯ জন, তারা সবাই পুরুষ।
মৃত চারজন হলেন- অপারেটর সিরাজগঞ্জের ওয়াহিদুজ্জামান স্বপন (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৫০)। মৃত নারীর নাম জানা যায়নি।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল জানান, আহতদের মধ্যে চারজন তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এরমধ্যে শাহ আলমের (৪৬) শরীরের ছয় ভাগ, দিলীপ দাসের (৩৬) আট ভাগ পুড়েছে। রিপন দাসের (৩০) শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া রাসেল খান (২৬) নামে একজনও বার্ন ইউনিটে রয়েছেন।
ভর্তি অন্যরা নানাভাবে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন। তারা হলেন- রাসেল (২২), আনোয়ার (৫০), কামরুল (২৭), মনোয়ার (৩৫), মিজু মিয়া (২৫), ইকবাল (৩৫), আশিক (১২), শিপন (৩৫), শাহীন আকমল (৩০), রোকন (৩৫), কামরুল (২৭), প্রাণকৃষ্ণ (৩৮), অজ্ঞাত পুরুষ (৫০)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশঙ্কাজনক রোগীদের আগে সেটল করছি। যার যার রক্ত-স্যালাইন প্রয়োজন, আমরা দিচ্ছি।”
১২ বছরের একটা শিশুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাচ্চাটি শকে আছে। তার অপারেশন প্রয়োজন। আমরা তৈরি আছি। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছি।”
উল্লেখ্য, শনিবার সকাল ৬টায় অগ্নিকাণ্ডে সূত্রপাত হয়।
জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. রফিকুজ্জামান জানান, সকাল ৬টার দিকে কাজ চলার সময় নিচ তলায় বয়লার বিস্ফোরণের পর কারখানার পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে জয়দেবপুর, টঙ্গী, কুর্মিটোলা, সদর দপ্তর, মিরপুর ও উত্তরাসহ আশে-পাশের ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা কাজ করছেন। তবে বেলা সোয়া ১১টায়ও পাঁচতলা ওই ভবনে আগুন জ্বলছিল। বাতাসের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ তলা কারখানা ভবনের দুটি তলা আংশিক ধসে গেছে।
শুরুতে কারখানা থেকে হাতহতদের উদ্ধার করে টঙ্গী হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখান থেকে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল ও উত্তরা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
তবে কী কারণে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। পাওয়া যায়নি কারখানা কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য।
এ ঘটনায় নিহতের ২০ হাজার টাকা ও আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক।