মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয়ায় ৩ বছর ধরে হয়রানি!

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৮:২৫

জাহিদুর রহমান তারিক

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃত্বকালী ছুটিতে থাকার কারণে গত ৩ বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চর মৌকুড়ি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামছুন্নাহার নামের এক প্রধান শিক্ষিকা।  

সেই সময়কার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, শিক্ষা অফিসের রিপোর্ট, ইউএনও অফিসের রিপোর্ট, উপজেলা পরিষদের রিপোর্ট, ম্যানেজিং কমিটির রিপোর্ট সহ সমস্ত রিপোর্ট শিক্ষিকার পক্ষে থাকা স্বত্ত্বেও তাকে ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে । 

এদিকে তার স্থলে নতুন একজনকে নিয়োগের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে একটি মহল। এর সাথে বর্তমানের শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ১৮০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান চর-মৌকুড়ি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহার। এই সুযোগে প্রত্যন্ত পল্লীর এই বিদ্যালয়টিতে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি ও প্রভাবশালী মহল মিজানুর রহমান নামের একজন কে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেষ্টা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে চাপে পড়ে কর্তৃপক্ষ ।

তখন বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এ সংবাদ প্রকাশ হয়।

এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন অফিস একযোগে তদন্ত চালায়। সমস্ত তদন্ত রিপোর্টও সামছুন্নাহারকে বৈধ প্রধান শিক্ষক হিসাবে ঘোষনা করে রিপোর্ট দেয়। 

এমনকি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকেও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত চাই। কিন্তু গত ৩ বছরেও সমাধান করা হয়নি প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহারের চাকুরী প্রসঙ্গটি। কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো বর্তমানের তদন্ত কমিটি পূর্বের রিপোর্টগুলোকে অগ্রাহ্য করে শিক্ষিকাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এদিকে মিজানুর রহমান নামে যে শিক্ষককে সেখানে নিয়োগের চেষ্টা চলছে তার ডিগ্রী সনদ জাল হতে পারে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঐ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খয়বার হোসেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির বৈধ প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহারই।

আরো জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কে সরকারিকরণের জন্য যাচাই বাছাই তালিকা চাওয়া হয়েছে, এই তালিকায় চর মৌকুড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের তথ্য ছকে প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহারের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণের ব্যাপারে গড়িমসি করা হচ্ছে।

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৩ বছর ধরে হয়রানির শিকার হওয়া চর মৌকুড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহার জানান, ছুটি ভোগ শেষে যথা সময়ে তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেন, কিন্তু কাগজ-কলমে বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি জানান আজো অব্দি ক্লাস করে চলেছেন, তবে অসহায় হয়ে পড়ছেন ঘুরতে ঘুরতে।

শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে বিষয়গুলো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত