চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ৬ লাখ মানুষ করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২০, ১৮:৪৪
দেশে অঘোষিত 'লকডাউনে' বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এসব প্রতিষ্ঠান। সীমিত করা হয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সেবাদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে সেগুলোও গ্রাহকদের অফিসে না এসে অনলাইনে সেবা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সারাদেশে যখন সতর্কতামূলক এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তখন কেবল চালু রয়েছে দেশের চা বাগানগুলোর কার্যক্রম।
শ্রম অধিদপ্তরের নির্দেশে চালু রাখা হয়েছে দেশের ১৬৬টি চা বাগানের কার্যক্রম। এমতাবস্থায় এসব চা বাগানের শ্রমিকসহ তাদের পরিবারের প্রায় ৬ লাখ মানুষ রয়েছেন ঝুঁকিতে। বাগান কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করায় আজ সোমবার থেকে কিছু কিছু বাগানের শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা যায়, দেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে সিলেটে ১৯টি, মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি রয়েছে। এসব বাগানে নিয়মিত ১ লাখ ১৮ হাজার ও অনিয়মিত আরো প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের পরিবার মিলে চা জনগোষ্ঠীর লোকের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। বাগান বন্ধ না হওয়ায় প্রতিদিনই কাজে যেতে হচ্ছে শ্রমিকদের। অতি দরিদ্র এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ায় এবং বাগানের বস্তিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমনের বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণার পর থেকে চা শ্রমিক নেতারা চা বাগানগুলোও বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করে শ্রম অধিদপ্তর থেকে চা বাগান চালু রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে মালিকরাও বন্ধ রাখতে পারছেন না বাগান।
এদিকে, বাগান কর্তৃপক্ষ ছুটির ঘোষণা না দেওয়ায় সিলেটের লাক্কাতুড়া, মালনীছড়া, খাদিম ও বুরজানসহ কয়েকটি বাগনের শ্রমিকরা আজ সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে তারা শ্রমিকদের কাজে না গিয়ে ঘরে অবস্থানের অনুরোধ জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, চা শ্রমিকরা খুব বেশি স্বাস্থ্য সচেতন নয়। অতিদরিদ্র শ্রেণীর এই শ্রমিকদের কেউ কাজে গিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে পুরো বাগানে এই রোগ ছড়িয়ে পড়বে। চা বাগানের বস্তিগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় মহামারি দেখা দিতে পারে। এজন্য শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আজ সোমবার থেকে শ্রমিকদের কাজে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আশা করছি বাগান মালিকরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে দুর্যোগকালীন এই সময়ে বাগানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করবেন। বুরজান চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক সবুর আহমদ চৌধুরী বলেন, শ্রম অধিদপ্তর থেকে বাগানগুলো চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাগান বন্ধ রাখলে বাগানের উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাগানের চা গাছ ও নার্সারির ব্যাপক ক্ষতি হবে। এমতাবস্থায় বাগান বন্ধ দিতে হলে সরকারের প্রণোদনা দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, বাগানের শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম হিসেবে তাদেরকে পরিস্কার পরিচ্ছন থাকতে বলা হয়েছে। বাগানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে করণীয় কি কি তাও তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। বাগানের পক্ষ থেকে সবধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা না থাকায় বাগান বন্ধ ঘোষনা করা সম্ভব হচ্ছে না।