ধর্ষণের পর ফাটিয়ে দেওয়া হয় তানিয়ার মাথার খুলি

প্রকাশ : ১২ মে ২০১৯, ০০:০১

জাগরণীয়া ডেস্ক

চলন্ত বাসে শুধু গণধর্ষণই নয়, ধর্ষণের পর ভারী কিছু দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে ফাটিয়ে দেওয়া হয় শাহিনুর আক্তার তানিয়ার মাথার খুলি। তানিয়া হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজিব কুমার এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম শাহিনুর আক্তার তানিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের পর ধর্ষকেরা ভারী কিছু দিয়ে শাহিনুরের মাথার পেছনে আঘাত করে এতে তার মাথার খুলি ফেটে যায়। এর ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় আর তাতেই মারা যান তানিয়া।

কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে শাহিনুর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি ছিল। সেগুলো শেষ করার পর ধর্ষণের ব্যাপারটি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে হত্যার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১২ মে (রবিবার) এই প্রতিবেদন বাজিতপুর থানা-পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ৬ মে (সোমবার) বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন তানিয়া। বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছালে চালক ও সহকারীরা তাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ করেন, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুল ইসলাম ও সহযোগি লালনসহ আরও পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানা হেফাজতে চালক নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে লাফ দেন। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে থাকা বাস থেকে মেয়েটি কেন হঠাৎ লাফিয়ে পড়লেন- সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চালক।

৭ মে (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার বিকেলে ঐ তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তানিয়ার ময়না-তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন। 

৮ মে (বুধবার) এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। 

নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত