চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ

প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৯, ১৮:০৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে কিশোরগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি সংগঠন। 

০৯ মে (বৃহস্পতিবার) কিশোরগঞ্জ শহরে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত  বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

পৃথক পৃথক মানববন্ধন থেকে বক্তারা তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবী করেন। সেই সাথে নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচির মধ্যে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শহরের রঙমহল চত্বরে বাম গণতান্ত্রিক জোট মানববন্ধন থেকে বক্তারা এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এতে বক্তব্য রাখেন- জেলা সিপিবির সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, আবুল হাসেম মাস্টার, আব্দুর রহমান রুমী, অ্যাডভোকেট হাসান ইমাম রঞ্জু প্রমুখ। 

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন জেলা নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সমাবেশ ও মানবন্ধন কর্মসূচি থেকে বক্তারা রাস্তায় নেমে এ ঘটনার প্রতিবাদের দাবী জানান।

এদিকে শহরের কালীবাড়ি সড়কে মানববন্ধন করে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। 

উল্লেখ্য, ৬ মে (সোমবার) বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন তানিয়া। বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছালে চালক ও সহকারীরা তাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুল ইসলাম ও সহযোগি লালনসহ আরও পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানা হেফাজতে চালক নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে লাফ দেন। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে থাকা বাস থেকে মেয়েটি কেন হঠাৎ লাফিয়ে পড়লেন- সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চালক।

৭ মে (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাসটির চালক ও চালকের সহকারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

মঙ্গলবার বিকেলে ঐ তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তানিয়ার ময়না-তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন। 

কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডা. রমজান মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।  

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত