চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা: ৫ আসামির ৮ দিনের রিমান্ড
প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৯, ২৩:০২
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) নামে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫ জন আসামিকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানি শেষে ৮ মে (বুধবার) বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এ আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন- গাজীরপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), একই উপজেলার বীরউজলী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২) একই উপজেলার লোহাদী গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) এবং বাজিতপুর উপজেলার নীলক্ষি গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) সারোয়ার জাহান জানান, গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে বুধবার দুপুরে বাজিতপুর থানা থেকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ৬ মে (সোমবার) বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন তানিয়া। বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছালে চালক ও সহকারীরা তাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুল ইসলাম ও সহযোগি লালনসহ আরও পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানা হেফাজতে চালক নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে লাফ দেন। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে থাকা বাস থেকে মেয়েটি কেন হঠাৎ লাফিয়ে পড়লেন- সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চালক।
৭ মে (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ঐ তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তানিয়ার ময়না-তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডা. রমজান মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।