নুসরাত হত্যা: উপজেলা আ. লীগ সভাপতির রিমান্ড
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২২:১৮
গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২০ এপ্রিল (শনিবার) সন্ধ্যায় ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, ১৯ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রুহুলকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। পরে তাকে নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শনিবার রুহুল আমিনকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডে রুহুল আমিনসহ এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ২৭ মার্চ নুসরাতের করা শ্লীলতাহানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কারাগারে যাওয়ার পর রুহুল আমিনের লোকজন প্রতিবাদকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এছাড়া ২৮ ও ৩০ মার্চ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন তার লোকজন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল (রবিবার) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয় নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেনকে। সেখানে পর্যায়ক্রমে রাত প্রায় একটা পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম ২৫ পৃষ্ঠা এবং নূর উদ্দিন ৩০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে গত ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানি থেকে শুরু করে ৬ এপ্রিল তার ওপর অগ্নিসন্ত্রাস চালানো পর্যন্ত সব ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দি অনুসারে পুরো ঘটনায় ২৫–২৬ জন জড়িত।
জবানবন্দিতে শাহাদাত জানান, নুসরাতকে হত্যার বিষয়ে গোপন বৈঠক হয় ৪ এপ্রিল রাতে। এসময় শাহাদাত ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের, জাবেদ, জোবায়ের, মহিউদ্দিন শাকিল, শামীম (২), ইমরান, ইফতেখার হোসেন রানা ও শরীফ। নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত, নূর উদ্দিন ও কাদের। ৬ এপ্রিল আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষার দিন নুসরাতকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। থানা–পুলিশের বিষয়টি মাকসুদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা) এবং রুহুল আমিন (উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) দেখবেন বলেও ঠিক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে শাহাদাত, জোবায়ের, জাবেদ, ও মণি সাইক্লোন শেল্টারের (তৃতীয় তলা ভবন) ছাদে অবস্থান নেন। শাহাদাত, জাবেদ ও জোবায়ের এর জন্য মণি তার বাড়ি থেকে তিনটি বোরকা নিয়ে আসেন আর কেরোসিন আনেন শাহাদাত। আর নুসরাতকে কৌশলে ডেকে আনেন উম্মে সুলতানা পপি। এসময় গেটে অবস্থান নেন আফসার ‘স্যার’, গেটের বাইরে নূর উদ্দিন, হাফেজ কাদের, ইমরান হোসেন মামুন ওরফে ইমরান, ইফতেখার হোসেন ওরফে রানা, মো. হোসেন ওরফে শরীফ। সাইক্লোন শেল্টারের নিচে পাহারায় ছিলেন মহিউদ্দিন শাকিল ও শামীম (২)।
জবানবন্দিতে শাহাদাত আরও বলেন, "নুসরাতকে নিয়ে পপি ছাদে উঠার পর সে মামলা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানালে তিনি নিজে পেছন থেকে এক হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন ও অন্য হাত দিয়ে হাত ধরেন। উম্মে সুলাতানা পপি তখন নুসরাতের পা এবং জান্নাত আফরোজ মনি নুসরাতের শরীর চেপে ধরেন। এরপর তিনজন মিলে নুসরাতকে মেঝেতে ফেলে দেন। জোবায়ের নুসরাতের ওড়না ছিঁড়ে হাত–পা বেঁধে ফেলে আর জাবেদ পলিব্যাগে থাকা কেরোসিন নুসরাতের পা থেকে বুক পর্যন্ত ঢেলে দেয়। এরপর জোবায়ের ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়। নুসরাতের মুখ শামীম চেপে ধরায় সেখানে আর কেরোসিন ঢালা হয়নি। তাই পুরো শরীর পুড়লেও মুখে আগুন লাগেনি। এই পুরো ঘটনায় সময় লাগে প্রায় পাঁচ মিনিট। নুসরাতের গায়ে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে শাহাদাত, জাবেদ ও জোবায়ের বোরকা খুলে কৌশলে পালিয়ে যান। আর মণি ও পপি ওরফে শম্পা পরীক্ষার হলে ঢুকে যায়, কারণ তারা দুজনই নুসরাতের মতো আলিম পরীক্ষার্থী। আগুনে নুসরাতের প্রথমে পায়ের বাঁধন খুলে যায়, পরে হাতের বাঁধন খুলে যাওয়ার পর সে নিজেই চিৎকার করতে করতে নিচে নেমে আসে"।