নিমতলী ট্র্যাজেডি থেকে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

রাজধানীর চকবাজারের আগুনের ভয়াবহতা বারবার স্মরণ করয়ে দিচ্ছে পুরান ঢাকার নিমতলীর সেই ট্র্যাজেডির কথা। নিমতলীর ঘটনার পর সাবধান হলে আজ এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতো না-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই।

নিমতলী আর চকবাজার, জায়গা ভিন্ন, সময়ও ভিন্ন। কিন্তু পরিণতি সেই একই। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তা, আবাসিক এলাকায় কারখানা আর কারখানায় থাকা দাহ্য বস্তু মুহুর্তেই ছড়িয়ে দেয় আগুন।  

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশেই থাকা প্লাস্টিক কারখানায়। ওই কারখানাতেই ছিল বিপজ্জনক কেমিক্যাল। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মানুষের চোখের সামনে বহু মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৪ জনে। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় অসংখ্য বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা।

সংবাদ মাধ্যমে ওই সময়কার প্রতিবেদনে জানা যায়, সরু আর ঘিঞ্জি রাস্তার কারণে আগুন নেভাতে এসে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। এদিকে, কেমিক্যালের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনে নিহতের সংখ্যা কমাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। অনেক মরদেহই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসময় ৫ জুন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি।

এবারও একই ঘটনা। আগুন লাগে পুরান ঢাকার  চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন। কারখানার কেমিক্যালের কারণে দ্রুত আগুন আশাপাশের পাঁচটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় ৫ ঘন্টা পর রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

আগুন নেভানোর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিষয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বলেন, এখানে আসার রাস্তাটির দু’পাশই সরু। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে ঢুকতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ভবনে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মোট পাঁচটি ভবনে আগুন লেগে যায়। 

বৃহস্পতিবার দুপুর বেলা দেড়টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই অগ্নিকাণ্ডে ৭৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ এক ব্রিফিংয়ে জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৭৮টি মরদেরহ উদ্ধার হয়েছে। আগুনের কারণ এখনও জানা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে; যা আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদনে দেবে বলে জানান তিনি।

নিহতদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, সাতজন নারী ও পাঁচটি শিশু রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। নিহতদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ; খোঁজ নেই অনেকের।

0Shares
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত