সুবর্ণচরে গণধর্ষণ: দর্শনার্থীদের ভীড়ে বিপর্যস্ত সেই নারী

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩১

জাগরণীয়া ডেস্ক

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের দিন রাতে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ দর্শনার্থীর ভিড় ও অসতর্কতার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অব্যাহত দর্শনার্থীদের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) এ ভুগছেন ঐ নারী। 

গত ৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ৮ নম্বর কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, শারিরীক অবস্থা নাজুক ঐ গৃহবধূর, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। তিনি বলেন, তার ডান পা অবশ হয়ে আসছে। অরুচির কারণে খেতে পারছি না। দর্শনার্থীদের প্রবেশের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। আমার একটু ঘুম আর বিশ্রাম দরকার।

নির্যাতনের শিকার ঐ নারীকে দেখতে গত ১০ দিনে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ঐ গৃহবধূকে দেখতে যান নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম  চৌধুরীর নির্দেশে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেসময় তারা ঐ নারীর যাবতীয় চিকিৎসাব্যয়, পরিবারের পুনর্বাসন ও সব রকম আইনি সহায়তার দায়িত্ব নেন। একইদিন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং নির্যাতিতার পাশে আছেন বলে জানান। গত ৫ জানুয়ারি তারা ঐ নারীকে দেখতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে যান মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে আ স ম রব, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়া ঐ নারীকে দেখতে হাসপাতালে কয়েকশত মানুষ নিয়ে যান হিরো আলম। সেসময় হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। ওই নারীর নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দু'জন নারী ও দু'জন পুরুষ মোতায়েন রয়েছে। তবে তারা ভেতরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন না। 

এছাড়া নির্যাতনের শিকার ঐ গৃহবধূর সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফাইজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তারের নেতৃত্বে একটি দল, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল। সেই সাথে প্রতিদিনই হাসপাতালের কেবিনে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন ভীড় জমাচ্ছেন। সম্প্রতি একদল শিক্ষার্থীকে নির্যাতিতার কেবিনে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতে দেখা গেছে। সব কিছু মিলিয়ে নির্যাতিতা ভীষণ ভয় ও লজ্জার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। 

অহেতুক নির্যাতিতার কেবিনে ভীড় না করার অনুরোধ জানিয়ে নোয়াখালী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, নির্যাতন, রক্তক্ষরণ ও অতিরিক্ত লোকজনের পরিদর্শনের কারণে ওই নারীর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) দেখা দিয়েছে। এর ফলে নির্যাতিতার মানসিক ভারসাম্য হারানোসহ বিভিন্ন ট্রমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। 

তিনি আরও জানান, নির্যাতিতার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালক স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, আমি ওই নারীকে দেখতে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি প্রচণ্ড মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তার কাউন্সিলিং প্রয়োজন। এতেই তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষিত নারীকে দেখতে গিয়ে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে আমরা নোয়াখালীর প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হবে। 

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রাতে নৌকা প্রতীকে ভোট না দেয়ায় সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের পরিকল্পনায় ১০/১২ জন মিলে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ ঐ নারীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার ও আওয়ামী লীগ নেতা রহুল আমিনসহ সাত আসামিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত