বিপদের আস্থা ‘৯৯৯’
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:০২
আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর প্রায় এক বছর পাড়ি দিয়েছে জাতীয় কলসেবা নম্বর ‘৯৯৯’। বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ, গৃহকর্মী নির্যাতনসহ নারীর প্রতি হওয়া নানা সহিংসতা প্রতিরোধে গত এক বছরে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে ‘৯৯৯’।
ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিতে যেখানে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হয় জরুরী জাতীয় সেবা, সেই একই ধারায় বাংলাদেশও পরিকল্পনা হাতে নেয় একটি ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক নাম্বার চালু করার। পরিকল্পনা অনুযায়ি, জরুরি প্রয়োজনে নাগরিকদের তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ে পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘৯৯৯’।
২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও একধাপ এগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক ‘৯৯৯’সেবায় অ্যাপ ও ওয়েবসাইট চালু করেছে সরকার। সেসময় অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে উন্মোচনা করা হয়। শুরুর দিকেল কলসেবাটি কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীতে তা বিস্তার লাভ করবে বলে জানানো হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত এই লিংকে ‘তাৎক্ষণিক নাগরিক সেবায় ৯৯৯’
এক বছরের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে চালানো প্রোগ্রামটি আরও বিস্তৃত হয়। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘৯৯৯’ যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যে কোনও মোবাইল অপারেটর থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করার মাধ্যমে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা দেশের যেকোন প্রান্তে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ইউরোপ আমেরিকা নয়, বাংলাদেশের গল্প-
‘ইউরোপ আমেরিকা নয়, বাংলাদেশের গল্প’-ঠিক এমনই এক শিরোনামে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাগরণীয়ার মুক্তগণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এই লেখাটি। পুলিশ কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘৯৯৯’ এ কল করার বিস্তারিত। বিভিন্ন উদাহরণের শেষে তিনি লিখেন, ‘আপনার জরুরী প্রয়োজনে দিন রাত কান পেতে রয়েছে ন্যাশনাল হেল্প ডেস্কের সেচ্ছাসেবকরা। শুধু আপনার বিপদে পাশে দাঁড়াতে, যে কোন সময়। আসুন যাত্রা শুরু নতুন বাংলাদেশ এর পথে। প্রবেশ করি ট্রিপল নাইন এর বাংলাদেশে। বিপদে ডায়াল করুন 999। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।’
বাল্যবিয়ে বন্ধ ও ধর্ষক গ্রেপ্তার
‘৯৯৯’ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার ২ দিনের মধ্যেই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও গাজীপুরে পৃথক দুই ঘটনায় জাতীয় জরুরী এই সেবার সুফল পেয়েছে আক্রান্তরা। এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা ‘৯৯৯' এর একটি ফোন কল, অতঃপর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ‘৯৯৯’ এ কল পেয়ে ১৩ বছরের এক কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করে পুলিশ।
অপর ঘটনাটি ঘটে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। বিয়ে বাড়ীতে প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা জানিয়ে ‘৯৯৯’ এ কল করে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা। পরে পুলিশ ঐ তরুণীকে উদ্ধার ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
২০১৮ সালের ২১ মে গাজীপুরের শ্রীপুরে জোর করে গাড়িতে তুলে ধর্ষণচেষ্টার একটি ঘটনা দেখে ফেলেন এক পথচারী। গাড়ির বর্ণনা দিয়ে ‘৯৯৯’ এ কল দিলে, পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার ও কবির হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
ইস্কাটন গার্ডেনে গৃহকর্মী উদ্ধার
২০১৮ সালের ২১ জুন রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে শাওন নামে ১২ বছরের এক গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ঐ গৃহকর্মীকে উদ্ধারের পাশাপাশি ঐ বাসার তিনজনকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ।
ধর্ষণের শিকার এক পোশাক শ্রমিক নিজেই ‘৯৯৯’ এ কল দিয়ে ধর্ষকদের ধরিয়ে দেন। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকায় ঐ ঘটনা ঘটে।