একই উঠোনে মন্দির-মসজিদ
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৮
এক পাশে ধূপকাঠি, আর অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। মসজিদে চলছে জিকির, মন্দিরে উলুধ্বনি। যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছে একই উঠানে দু’টি ধর্মীয় উপাসনালয়।
লালমনিরহাট জেলা শহরের কালীবাড়ী এলাকায় একই উঠানে অবস্থিত পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দির। দীর্ঘ কাল থেকে এখানকার বাসিন্দারা সৌহার্দপূর্ণ মনোভাবে পালন করছেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ সনদ চন্দ্র সাহা জানান, প্রায় দেড়শ’ বছর আগে কালীমন্দির হিসেবে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যার কারণে এলাকাটির নামকরণও হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে মসজিদ ও মন্দির।
তিনি আরো জানান, পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। মসজিদ কমিটি’র লোকজন আমাদের সহযোগিতা করেন ফলে সামান্যতম বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছেন তিনি।
পুরান বাজার জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজল মিয়া জানান, পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ্য আছে, আল্লাহ আমাদের এক আদম ও হাওয়া থেকে সৃষ্টি করে বিভিন্ন শ্রেণি, বর্ণ, গোত্র, ধর্মে বিভক্ত করে দিয়েছেন। যেনো আমরা একে অপরের সর্ম্পকে চিনতে ও জানতে পারি। এ ছাড়া আমাদের নবীজিও তার বিদায়ী হজ্বের ভাষণে বলেছেন, তোমরা কেউ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না। তোমাদের আগে অনেকেই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে। সেই বিশ্বাস থেকেই ধর্মীয় সম্প্রীতির এটি একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। যুগ যুগ ধরে একই উঠানে চলছে নামাজ ও পূজা-অর্চনা। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখেন মন্দির কমিটি। আজান ও নামাজেতো খুব বেশি সময় লাগে না।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এটিই এখানকার মানুষ বিশ্বাস করেন। সত্যি এটি ধর্মীয় সম্প্রীতির এটি একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।