স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন যুবককের মৃত্যুদণ্ড
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০৫
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষা বাকাকুড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে দণ্ডপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, মামলার ১নং আসামি বাকাকুড়া গ্রামের ফজল হকের ছেলে আমান উল্যাহ্ (২৩), মৃত মজিবর রহমানের ছেলে কালু (৩০) (পলাতক), হাবিবুর রহমানের ছেলে নূরে আলম (২৮)।
দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর ৩ আসামি হারুন-অর-রশিদ (৩৬), সুন্দরী বেগম (৩৬), আনোয়ার হোসেন আনু (১৮) কে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
২৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টায় শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল সেকের কন্যা ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় একই গ্রামের প্রতিবেশী ফজল হকের ছেলে আমান উল্যাহ। এতে শিশুটির বাবা মা রাজি হয়নি। এঘটনার পর শিশুটির বাবা মাসহ তারা ঢাকায় চলে যায় এবং গামেন্টের্স চাকুরি নেয়।
বেশকিছু দিন পর ঐ স্কুলছাত্রীর তার বাবা-মা গ্রামের বাড়ি বাকাকুড়া গ্রামে ঈদ করতে আসেন এবং ঐ শিশুটিকে তার নানীর কাছে রেখে তার বাবা মা পুনরায় ঢাকায় চলে যান। এদিকে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামি কালু নানী বাড়ি থেকে কৌশলে মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে মামলার ১নং আসামি আমান উল্যাহ্, নূরে আলম, কালুসহ বিনা আক্তারকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে এবং ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মুখোমন্ডল এসিড দিয়ে জ্বলসে দেয়। পরে তার যৌনাঙ্গে ২ ফুট লম্বা একটি গাছের ডাল ঢুকিয়ে রাখে। পরবর্তীত তার লাশ বাকাকুড়া এতিমখানার পশ্চিম পার্শ্বে শিলঝুড়া খালে ফেলে দেয়।
এদিকে শিশুটির নানীসহ আত্মীয় স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজির করলেও শিশুটিকে কোন খোঁজ তারা পায়নি। ঘটনার দুইদিন পর ২১ জুলাই স্থানীয় এক ইউপি সদস্য স্কুলছাত্রীটির মরদেহ খালে ভাসতে দেখে তার পরিবারের কাছে খবর দেয়। আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থল গিয়ে শিশুটির জামা কাপড় দেখে তার লাশ সনাক্ত করে।
খবর পেয়ে বিনাইগাতী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতল মর্গে প্রেরণ করে।
এঘটনায় শিশুটির মা সবুজা খাতুন আমান উল্যাহ্ (২৩), কালু (৩০), নূরে আলম (২৮), হারুন-অর-রশিদ (৩৬), সুন্দরী বেগম (৩৬), আনোয়ার হোসেন আনু (১৮)সহ ৬ জনকে চিহ্নিত করে ২১/৭/১৬ তারিখে ঝিনাইগাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার পর পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত আমান উল্যাহ্ ও সহযোগি নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করলেও এ ঘটনার পর থেকেই অপর আসামি কালু পলাতক থাকে। মামলা তদন্তকারী অফিসার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম তদন্ত শেষে ৬ আসামির বিরুদ্ধে বিগত ২০/১০/২০১৬ তারিখে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন।