রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৪২
‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত বীর মাতা রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রমা চৌধুরী।
গত প্রায় ৪ বছর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রমা চৌধুরীর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই গণভবনে তার সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রমা চৌধুরী, তবে কোনো ধরনের সাহায্য নেবেন না এ শর্তে। এ সময় রমা চৌধুরীর মুখে তার সব হারানোর কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহনকারী রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে যোগ দেন। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। ১৯৭১ সালেও তিনি বোয়ালখালীতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ৭৬ বছর বয়সী রমা চৌধুরী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিতই শুধু হননি; সে সময় হারিয়েছেন তার দুই শিশু পুত্রকে। ফটিকছড়িতে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৮ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত। সেখানে নানা ধরনের চক্রান্তে পড়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর আর চাকরি করেননি কোথাও। লেখালেখি করেই এতটা বছর পার করছেন। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছোট ছেলের মৃত্যু হয় এক সড়ক দুর্ঘটনায়।
পুত্রদের মৃত্যুর পর তিনি তাদেরকে হিন্দু ধর্মমতে দাহ না করে মাটিতেই সমাহিত করেছিলেন এবং তারপর থেকে পায়ে আর জুতা পরেননি দুঃখিনী এই মা। যে মাটির নিচে তার ছেলেরা ঘুমিয়ে আছে সেই মাটিতে তিনি জুতা পায়ে হাঁটতে পারেন না এমনটাই বলেন রমা চৌধুরী। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বই বিক্রি করেই চলেছেন তিনি এতদিন। অবিরামভাবে লিখে চলেছেন বিভিন্ন পত্রিকাতে। এরই মধ্যে রমা চৌধুরীর ১৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘একাত্তরের জননী’ বইটির প্রথম খণ্ড ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এটি মূলত তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। কারো কাছ থেকে তিনি কোন আর্থিক বা বৈষয়িক সাহায্য নেননি এখন পর্যন্ত। শুধুমাত্র তার কাছ থেকে বই কিনলেই টাকা নিয়েছেন, এ ছাড়া নয়।
আজীবন সংগ্রামী এই বীর মাতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র।