‘গুজব ও অপপ্রচারে কান দেবেন না’
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০১৮, ১২:৪৪
যে কোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সবাইকে সজাগ থাকার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৫ আগস্ট (রবিবার) সকালে গণভবন থেকে ১০ জেলার ৩০০ ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানুষ যেমন সেবা পাচ্ছে, তেমনি মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে। কারণ আমরা যত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, ততই এসব প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরিরও কেউ কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে। সেজন্য আমরা বলব, কেউ গুজবে কান দেবেন না, মিথ্যা অপপ্রচারে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। যা-ই দেখেন, শোনেন, আগে যাচাই করে নেবেন। যাচাই না করে যেন কিছু করবেন না।
এক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও দেশের যুবসমাজের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তারা যেন কোনো রকম গুজব না ছড়ায় বা গুজবে বিভ্রান্ত না হয়।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব যেন তারা ভালো কাজে ব্যবহার করে, নোংরা কাজে না। সেখানে নোংরা বক্তব্য দেয়া, নোংরা কথা বলা, অপপ্রচার চালানো, এগুলো পরিহার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ডিজিটাল প্রযুক্তি, যা আধুনিক জীবন গড়ার কাজে, জীবনকে সুন্দর করার কাজে, শিক্ষা গ্রহণ করার কাজে ব্যবহার করতে পারে, সেটা যেন কোনোভাবেই অপব্যবহার না হয়। ছেলেমেয়েদের কেউ যেন সন্ত্রাস বা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন কিছুদিন আগে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা দু’জন শিক্ষার্থী হারিয়েছি। আমরা এজন্য অত্যন্ত দুঃখিত। সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান করে আসছিলাম। গাড়িচালকদের আমি বলেছি, তারা যেন ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালায়। পাশাপাশি পথচারীদের ও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, স্কুল থেকেই ট্রাফিক আইন শেখাতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশও সেবা দিতে পারে। ছাত্র-শিক্ষকসহ আগ্রহী যে কেউ রাস্তা পারাপারে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যেখানে যেখানে ওভারপাস, আন্ডারপাস করা দরকার সেসবও করে দিতে সরকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুকে হারানোর ফলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। হারানোর বেদনা আমার থেকে বেশি কেউ বুঝবে না। আমি আমার পরিবারকে হারিয়েছি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। গাউসিয়া মার্কেট থেকে হঠাৎ করেই স্কুল ইউনিফর্ম বিক্রি হয়ে গেছে। পলাশি থেকে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র তৈরি হচ্ছে। এই তৃতীয় পক্ষ কোমলমতি শিশু-কিশোরদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে, আগুন সন্ত্রাস করে অনিক, হৃদয়ের মতো মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে, তারা শিক্ষার্থীদের ওপরও যে কোনো সময় ভয়াবহ কিছু ঘটাতে পারে-বলেন তিনি।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের ঘরে রাখেন। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট করেছে। এখন তৃতীয় পক্ষ যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে তার দায় কে নেবে?’ বাবা-মা, শিক্ষকদের অনুরোধ করছি কোমলমতি শিশুদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পড়াশুনায় মনোযোগ হতে বলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পড়াশোনা আবার শুরু করতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা পড়াশোনায় ফিরে যাও।
প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনাদের সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার। তাদের রাস্তা থেকে তুলে তাদের স্কুলে কলেজে পাঠান। লেখাপড়ার পরিবেশ নিয়ে আসেন। তারা লেখাপড়া করুক। যথেষ্ট হয়েছে, আর না। এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে হবে। আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক সেটা আমি চাই না, বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের বাম পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে বাস চাপায় ঘটনাস্থলেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিমের মৃত্যু হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকেই নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবীতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।