মুক্তামনির বিদায়, শোকে স্তব্ধ কোটি মানুষ
প্রকাশ : ২৪ মে ২০১৮, ১০:৪০
সাতক্ষীরা সদরের কামারবাইশা গ্রামের বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত আলোচিত শিশু মুক্তামনি চির বিদায় নিয়েছে। বুধবার সকাল ৭.৫০ মিনিটে নিজ বাড়িতে মারা যায় হাস্যজ্জ্বল এই মেয়েটি। বেলা ২.৩০ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ১২ বছর বয়সী শিশু মুক্তামনিকে। তার জানাজায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শত শত মানুষ। দোয়া ও জানাজা পরিচালনা করেন মুক্তামনির ফুপাতো ভাই মনিরুজ্জামান।
জানাজায় অংশ নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর মুক্তামনিকে সুস্থ করতে কোন গাফিলতি ছিলো না। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। টানা ৬ মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়নি মুক্তামনি। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, মুক্তামনির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শত শত মানুষ শেষ এক নজর দেখার জন্য ভিড় করতে থাকে। শোকে স্তব্ধ ছিল সবাই। মুক্তামনির মুত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন সাতক্ষীরার প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম গাজী, মা আসমা বেগম, বোন হীরামনি, দাদী সালেহা বেগমসহ গোটা পরিবার এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম গাজী বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জ্বর এসেছিলো মুক্তামনির। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডাক্তার সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার হাফিজুল্লাহ ও ফরহাদ আলম এসে জ্বরের চিকিৎসা দেন। তাৎক্ষনিক আমি ওষুধপত্র নিয়ে আসি। দুপুরে ও রাতে সেই ওষুধ খাওয়াই। রাতে একটা সফেদা খেয়েছিলো। বুধবার সকালে কিছু খায়নি। আমার হাতের উপর মারা যায় মেয়েটি। এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মুক্তামনির বাবা।
মুক্তামনির দাদী সালেহা বলেন, সকালে মুক্তামনি আমার কাছে পানি খেতে চেয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পানি খেতে পারেনি। পানি আনতে গেলে পানি নিয়ে গিয়ে দেখি মুক্তামনি মারা গেছে। তখন মুক্তার বাবা ইব্রাহিম ও মা আসমা বেগম পাশে বসে ছিলো।
এদিকে শোকে স্তব্ধ মুক্তামনির মা আসমা বেগম কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তার চোখে শুধুই অশ্রু। কান্নার রোল গোটা পরিবারে। সেই সঙ্গে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন মুক্তামনির সুস্থতা কামনাকারী কোটি মানুষ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরলরোগে আক্রান্ত মুক্তামনিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ওই বছরে ১১ জুলাই সরকারি উদ্যোগে মুক্তামনিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। টানা ছয় মাসের চিকিৎসায় খানিকটা উন্নতি হওয়ায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মুক্তামনিকে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি পাঠানো হয়। বাড়িতে আসার পর থেকে তার অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। তার দেহে নতুন করে পচন ধরে যায়। পোকা জন্মায়। এমনকি রক্তও ঝরতে থাকে। এক পর্যায়ে ওষুধপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।