দাদার কবরের পাশে শায়িত মুক্তামনি

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১৯:০৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামে দাদার কবরের পাশেই চির দিনের জন্য শায়িত হলেন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া শিশু মুক্তামনি।

২৩ মে (বুধবার) বাদ জোহর জানাজা শেষে মুক্তামনিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরহাদ জামিলসহ স্থানীয় গ্রামবাসী জানাজায় অংশ নেন।  

এর আগে মুক্তামনিকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন- সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আব্দুল সাদী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার। দাফনের সময় মুক্তামণির বাবা-মাসহ এলাকার মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। মুক্তামনির মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম গাজি ও আসমা দম্পত্তির ঘরে ২০০৬ সালে যমজ কন্যাসন্তান জম্মগ্রহণ করে। আদর করে নাম রাখা হয় হীরামণি ও মুক্তামণি। দেড় বছর বয়সে মুক্তামণির ডান হাতের কবজি ফুলতে শুরু করে।  ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তার হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়! একপর্যায়ে হাতে পচন ধরে। সাদা রঙের শত শত পোকা ঘুরে বেড়াতে থাকে সেই ফুলে যাওয়া অংশে। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতেও পারতো না। হাতের সঙ্গে বুকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। দীর্ঘ নয় বছরেও মুক্তার রোগ ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা।

এরপর সংবাদমাধ্যমে তার কথা উঠে এলে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ভর্তি করা হয় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় মুক্তামনির কাগজপত্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুক্তামনির অসুখ আরোগ্যযোগ্য নয়। তবে ঢামেকের চিকিৎসকরা রোগ সারাতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।

অবশেষে দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা সেবার পর গত ২২ ডিসেম্বর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসে মুক্তামণি। তবে পরবর্তীতে মুক্তামণি আর ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। একইসঙ্গে মুক্তামণির অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে তার পরিবারও। গত ১ সপ্তাহ আগে মুক্তামনির শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। 

২৩ মে (বুধবার) সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে নিজ বাড়িতে বাবা-মায়ের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাত্র ১২ বছরের মুক্তামনি। দীর্ঘদিনের সব ডাক্তারি প্রচেষ্টা এবং অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও আশীর্বাদকে পরাস্ত করে বিরল রোগ হেমানজিওমায় আক্রান্ত শিশু মুক্তামনি চির বিদায় নিলো।

0Shares
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত